মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে অনুপ্রবেশ: অমিত শাহ

স্বাধীন আন্তর্জাতিক ডেস্ক: 

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন, দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে অনুপ্রবেশ। তিনি বলেছেন, এই অনুপ্রবেশের কারণে ভারতের জনসংখ্যার ধর্মভিত্তিক চিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে, যা শুধু একটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়— এটি একটি “জাতীয় সমস্যা”।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে শাহ বলেন, “ভারতের ভোটাধিকার কেবল নাগরিকদেরই থাকা উচিত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যা সংবিধানের মূল চেতনাকে বিকৃত করছে।”

“জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে অনুপ্রবেশ দায়ী”

সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের বরাতে জানা যায়, অমিত শাহ বলেন, “মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ, অন্যদিকে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এই পরিবর্তন প্রজনন হারের কারণে নয়, বরং অনুপ্রবেশের ফলেই হয়েছে।”

তিনি ধর্মভিত্তিক দেশভাগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “ভারতের দুই প্রান্তে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই অবৈধ অনুপ্রবেশ চলছে, আর তার ফলেই এই জনসংখ্যাগত পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।”

শাহ আরও বলেন, “অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থীর মধ্যে পার্থক্য আছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে, কারণ অনেকেই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রধানত অনুপ্রবেশের কারণে, প্রজননের জন্য নয়।”

রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে অভিযোগের আঙুল

অমিত শাহ অভিযোগ করেন, কিছু রাজনৈতিক দল অনুপ্রবেশকারীদের ‘ভোট ব্যাংক’ হিসেবে ব্যবহার করছে। “ভোটাধিকার কেবল নাগরিকদেরই থাকা উচিত,” জোর দিয়ে বলেন তিনি।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “গুজরাট ও রাজস্থানেও তো সীমান্ত আছে, সেখানে কেন অনুপ্রবেশ হয় না?”— ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট কিছু রাজ্যে রাজনৈতিক সুবিধার জন্য এই প্রবাহকে ইচ্ছাকৃতভাবে রক্ষা করা হচ্ছে।

শাহের দাবি, “অনুপ্রবেশ কোনো রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, এটি একটি জাতীয় সমস্যা। বিরোধীরা বলে বিএসএফ কেন্দ্রের অধীনে, তাই দায়িত্ব কেন্দ্রের। কিন্তু সীমান্তের অনেক জায়গায় ভৌগোলিক কারণে বেড়া দেওয়া সম্ভব নয়। কেবল কেন্দ্র একা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারবে না, রাজ্য সরকারগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। কিছু দল অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করে, কারণ তারা সেখানে ভোট ব্যাংক খোঁজে।”

জনগণনা ও তথ্য তুলে ধরে যুক্তি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২০১১ সালের জনগণনার তথ্য তুলে ধরে বলেন, “আসামে এক দশকে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ। অনুপ্রবেশ ছাড়া এটি অসম্ভব।”

তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গের কিছু জেলায় বৃদ্ধির হার ৪০ শতাংশের বেশি, আর সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় তা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। শাহের ভাষায়, “এসবই অতীতের অনুপ্রবেশের স্পষ্ট প্রমাণ।”

তার দাবি, ঝাড়খণ্ডে আদিবাসী জনসংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে এবং এর মূল কারণ বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ।

সীমান্তে কঠোর নজরদারির আহ্বান

অমিত শাহ বলেন, “বিএসএফ কেন্দ্রের অধীনে কাজ করে ঠিকই, তবে সীমান্তে ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেক এলাকায় শক্ত বেড়া দেওয়া সম্ভব নয়। তাই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।”

রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া

অমিত শাহের বক্তব্যে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করেছে, বিজেপি সরকার জনসংখ্যার ধর্মভিত্তিক তথ্য ব্যবহার করে রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটাতে চাইছে। অন্যদিকে, বিজেপি বলছে— জাতীয় নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার স্বার্থে এই ইস্যুতে কঠোর অবস্থান জরুরি।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের জনগণনা ও আসন্ন রাজ্য নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ইস্যু ভারতের রাজনীতিতে আরও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *