মোহাম্মদ হোসেন হ্যাপী, ব্যুরো চিফ:
নারায়ণগঞ্জের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় স্থাপনা নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দীর্ঘ ছয় দশকের ভোগান্তির অবসান ঘটছে। জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক হিসেবে মানবিক উদ্যোগ নিয়ে আধুনিক ওয়াশ ব্লক নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদে এতদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত অজুখানা, পায়খানা বা প্রস্রাবখানার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন বিপাকে পড়তেন নামাজে আগত মুসুল্লিরা। পাশে আদালত চত্বর ও ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় যোহরের নামাজের সময় বিশেষ ভিড় তৈরি হতো, তখন আইনজীবী সমিতির বাথরুমই ছিল মুসুল্লিদের একমাত্র ভরসা।
দীর্ঘদিন কমিটি গঠনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এই প্রয়োজনীয় উন্নয়নকাজ মুখ থুবড়ে থাকলেও, সমস্যাটি জানার পর জেলা প্রশাসক এটিকে ‘মানবতার দায়িত্ব’ হিসেবে নেন।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বরাদ্দকৃত ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে আধুনিক ওয়াশ ব্লকের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ডিসি জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
স্থানীয়দের কৃতজ্ঞতা
মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা হাসানুজ্জামান বলেন,
“মুসুল্লিদের দীর্ঘদিনের বড় সমস্যার সমাধান হতে যাচ্ছে। এজন্য আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
মসজিদ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন,
“ডিসি সাহেব আন্তরিকতা নিয়ে সমাধানের পথে এগিয়েছেন। তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর ভাষায়,
“অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এখানে আসতেন, কিন্তু সমস্যা হয়তো চোখে পড়ত না। এই ডিসি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী মানুষ—তিনি সত্যিকারের মানবিক।”
মসজিদ কমিটির সদস্য হাজী কামাল উদ্দিন জানান, প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি মুসুল্লি এখানে নামাজ পড়েন, অথচ এতদিন ছিল মাত্র একটি পুরনো বাথরুম। নতুন ওয়াশ ব্লকে পর্যাপ্ত বাথরুম ও অজুখানা থাকবে।
রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্নে এই সদস্যের মন্তব্য—
“ডিসি সাহেব সৎ, দেশপ্রেমিক ও নিরপেক্ষ। আল্লাহর ঘর উন্নত রাখাই তাঁর উদ্দেশ্য।”
মানবতার সেবায় দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা
ভিত্তিপ্রস্তর শেষে মুসুল্লিদের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন,
“আমাদের সাধ রয়েছে অনেক কিছু করার। সামর্থ্য সীমিত হলেও মুসুল্লিদের সুবিধার জন্য সবসময় চেষ্টা করছি। আগামী মাসেই আরও বরাদ্দ আনার চেষ্টা করব।”
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় স্থানীয়দের অনুরোধে জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে নতুন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। দায়িত্ব পাওয়ার মাত্র সাত দিনের মধ্যেই দৃশ্যমান উন্নয়নকাজ শুরু করেন তিনি।
বর্তমানে দুইতলা বিশিষ্ট এই কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রায় এক হাজার মুসুল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন খতিব, দুজন মুয়াজ্জিন, দুজন খাদেম ও একজন ক্লিনার।