ওয়াহিদ হোসেন:
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সংস্থা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জোন—৬-এর ইমারত পরিদর্শক মোঃ মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিস্তৃত অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, চাকরির নব্বইয়ের দশকে তিনি সরকারি নকশা অনুমোদন, ভবন পরিদর্শন, ফাইল প্রসেসিং এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া কোনো কার্যক্রম সম্পন্ন করেন না।
দুদকে জমা পড়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, মনিরুজ্জামান শুধু ‘ঘুষের সিন্ডিকেট’-এর অংশই নন, বরং নিজের পেশার সঙ্গে মিলিয়ে এই ব্যবসাকে অত্যন্ত সুচারুভাবে পরিচালনা করছেন। অভিযোগকারীর দাবি, সাবেক চীফ হুইপ ও সংসদ সদস্য আসম ফিরোজের ছত্রছায়ায় থাকার সুযোগে তিনি মাত্র নয় বছরে কোটি কোটি টাকার সম্পদ সঞ্চয় করেছেন।
তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় তার দুইটি সম্পদ—একটি অভিজাত ফ্ল্যাট এবং ব্যক্তিগত গাড়ি। এছাড়া পটুয়াখালীর বাউফল, বরিশাল এবং নিজ গ্রামে বিশাল পরিমাণ জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। ব্যাংকে রয়েছে কোটি কোটি টাকার এফডিআর। অভিযোগকারীর দাবি, এই সম্পদের কোনো বৈধ উৎস নেই।
দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “প্রাথমিকভাবে অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুতর মনে হচ্ছে। যদি অনুসন্ধান শুরু হয়, তাহলে মনিরুজ্জামানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ সহজেই উদঘাটিত হবে।”
রাজউকের ইমারত পরিদর্শক হিসেবে মনিরুজ্জামানের ক্ষমতা শুধু ভবন অনুমোদন বা পরিদর্শনে সীমাবদ্ধ নয়। অভিযোগ আছে, তিনি নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপকে ঘুষ আদায়ের একটি সুযোগে পরিণত করেছেন। ফলে সাধারণ মানুষকে ঘুষ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে, নতুবা তাদের আবেদন ফাইল বা ভবন অনুমোদন আটকে রাখা হয়।
রাজউকের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, মোঃ মনিরুজ্জামান যে ঘুষ বাণিজ্য চালাচ্ছেন, তা একটি সুসংগঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মকর্তারা ও তাদের সহযোগীরা নিয়মিতভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এই ধরনের দুর্নীতি শুধু সরকারি আয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং নগর পরিকল্পনা ও সড়ক-নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এক ভুক্তভোগী জানান, “নকশা অনুমোদন বা ভবন পরিদর্শনের জন্য ফাইল জমা দিতে গেলে আমাদের নিয়মিতভাবে দালালদের মাধ্যমে ঘুষ দিতে হয়। সরকারি প্রক্রিয়া অনুসারে কাজ করাতে গেলে কোনো সহায়তা পাওয়া যায় না।”
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, মনিরুজ্জামান দালালদের মাধ্যমে প্রতিটি ফাইল প্রসেসিং এবং ভবন অনুমোদনের কাজকে নিয়ন্ত্রণ করেন। যারা তার নির্দেশনা অনুযায়ী ঘুষ প্রদান করেন, তাদের আবেদন দ্রুত প্রক্রিয়াকৃত হয়; আর যারা দেন না, তাদের আবেদন আটকে রাখা হয় বা দীর্ঘ সময় আটকে রাখার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করা হয়।
রাজউক জোন-৬-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করা এই কর্মকর্তা যদি এই ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যান, তা শুধু প্রতিষ্ঠানের সুনামের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং নগর উন্নয়নের স্বচ্ছতা ও জনগণের আস্থা বিনষ্ট করছে।
এ মুহূর্তে মোঃ মনিরুজ্জামান কোন মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। তবে দুদক ও রাজউক কর্তৃপক্ষের তদন্তে মনিরুজ্জামানের সম্পদের প্রকৃত চিত্র এবং দুর্নীতির বিস্তৃতি সামনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজউকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় এই ধরনের অভিযোগ প্রকাশের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরে আনা হয়েছে যে, প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ-বাণিজ্য প্রতিদিন নাগরিকদের অধিকার হরণ করছে এবং নগর উন্নয়নের স্বচ্ছতা ঝুঁকিতে ফেলছে।
তার বিরুদ্ধে থাকা আরো অভিযোগের বিস্তারিত আসছে