রাজউকের নিয়ম–নির্দেশনা অমান্য করে মাহাদি নগরে ১০ তলা ভবন নির্মাণ!

ওয়াহিদ হোসেন:

প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাসের ছোট্ট শহর ঢাকা। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নেই পর্যাপ্ত খেলার মাঠ বা শিশুদের জন্য বিনোদনের উপযুক্ত ব্যবস্থা। শিশুরা বড় হচ্ছে অস্বাভাবিক ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে। সেই মাঝেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশাল বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ হচ্ছে, যার অধিকাংশই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর অনুমোদন বা নির্দেশনা ছাড়াই।

রাজধানীর মাহাদী নগর কামরাঙ্গীরচর ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১৮ নম্বর গলিতে রাজউকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) নিয়ম–নির্দেশনা অমান্য করে নির্মিত হচ্ছে ১০ তলা একটি ভবন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অনুমোদিত নকশা ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ভবনটির নির্মাণকাজ পরিচালনা করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজউকের অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী এই ভবনটি বানানো হচ্ছে না। ভবনটির চার পাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা ছাড় না দিয়েই বানানো হচ্ছে ভবনটি। প্রায় ১০ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে রাজউকের নিয়ম–কানুন উপেক্ষা করে। ভবনে পর্যাপ্ত আলো–বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই, চারপাশে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা নেই এবং সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো ফায়ার সেফটি বা বিকল্প সিঁড়ির কোনো ব্যবস্থা নেই। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, কোনো দুর্ঘটনা বা অগ্নিকাণ্ড ঘটলে ভবনে বসবাসরত বাসিন্দাদের জীবন বিপন্ন হবে।

নির্মাণকাজ চলাকালে ভবনের পাশের বাড়িগুলোর দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী একাধিকবার রাজউক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে দাবি তাদের।

অভিযোগ রয়েছে, রাজউকের জোন–৫ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত অথরাইজড অফিসার সাঈদা ইসলাম বিষয়টি জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি “দেখেও না দেখার ভান করছেন।” ফলে এই অবৈধ নির্মাণ এখন রাজউকের নজরদারি ও জবাবদিহি ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,

“দিনরাত কাজ চলছে। রাজউকের কেউ আসে না। আমরা বললেও শোনে না। তারা বলে—সব ম্যানেজ করা আছে।”

সূত্র জানায়, ভবনটির নির্মাণ তদারকি করছেন আল আমিন।

এ বিষয় আল আমিন বলেন, “আপনারা আব্দুল হামিদের সাথে যোগাযোগ করুন, তিনি এই ভবনটি দেখছেন।” এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের এক কর্মকর্তা বলেন,

“মাহাদি নগর এলাকায় বেশ কিছু অননুমোদিত ভবন নির্মাণ চলছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী সংযোগের কারণে মাঠপর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।”

এ বিষয় অথরাইজড অফিসার সাঈদা ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নগরবাসীর দাবি, এই ধরণের অনিয়ম শুধুমাত্র নগর নান্দনিকতাকে নষ্ট করছে না—বরং ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করছে।

এ বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ ও অবৈধ ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *