রাজধানীতে ‘জুলাইযোদ্ধা’ ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে কেন্দ্র করে গণপিটুনি

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:

রাজধানীর গুলিস্তান ও ধানমন্ডিতে পৃথক দুটি সহিংস ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থক সন্দেহে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে একজন রিকশাচালক এবং একজন নারী রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পাশে একটি দল ‘জুলাইযোদ্ধা’ পরিচয় দেওয়া বিক্ষোভকারীরা রিকশাচালক মোহাম্মদ বাবুকে ঘেরাও করে মারধর করে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, তারা বাবুকে আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে সন্দেহ করেছিল। হামলার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তাদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নজরে আসে।

ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, রিকশাচালক মোহাম্মদ বাবুকে প্রথমে মারধর করা হয় এবং এরপর পাশের একটি মার্কেটে নিয়ে গিয়ে আবারও পিটুনি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারান। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশের গাড়িতে তোলা হলে গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। আহত রিকশাচালকের বাড়ি বরিশালের নেহালগঞ্জে অবস্থিত। স্থানীয়রা বলছেন, আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া হয়নি, যা উদ্বেগজনক বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে।

একই সময়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আরেকটি সহিংস ঘটনা ঘটে। এখানে একজন নারী ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়ার কারণে কিছু ব্যক্তির পিটুনির শিকার হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনের এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। আহত নারীকে পরে পুলিশ উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সংঘর্ষ বাড়ায় সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিশেষত, স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক মতপ্রকাশ বা সাধারণ স্লোগান দেয়ার কারণে মানুষকে আক্রান্ত করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশকর্মীদের আচরণকে অনেকেই কার্যত অগ্রাহ্য বা নিষ্ক্রিয় হিসেবে দেখেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজধানীর কেন্দ্রীয় এলাকায় এই ধরনের সহিংসতা দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য উদ্বেগজনক। তারা মনে করেন, সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক উত্থান-পতন ও সংঘর্ষের কাছে শিকার বানানো রাজনৈতিক সহিংসতার একটি দিক।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক হিংসা ও পিটুনি সংক্রান্ত অভিযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত, নির্বাচনী বা রাজনৈতিক কর্মসূচি সংক্রান্ত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার কারণে সাধারণ নাগরিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন।

এদিকে, আহত রিকশাচালক মোহাম্মদ বাবু ও ধানমন্ডির নারীসহ নিহত বা গুরুতর আহতদের চিকিৎসা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে চাপ তৈরি হচ্ছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, পুলিশ ও প্রশাসন সক্রিয়ভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

রাজধানীতে সাম্প্রতিক এই সহিংসতা রাজনৈতিক উত্তেজনা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক সুরক্ষার জন্য বড় ধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *