রোহিঙ্গা থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র: পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিচ ম্যানেজমেন্টে চাকরি

আব্দুল গফুর, কক্সবাজার:

কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনের কোনপাড়ার এলাকার বাসিন্দা আলী আহমদকে বাবা ও নুর নাহারকে মা দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেয়ে রোহিঙ্গা যুবক আব্দুল আজিজ রাতারাতি বাংলাদেশি নাগরিক ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পান। সম্প্রতি, ২০১৭ সালে এই এনআইডি হাতে পেয়েছেন আব্দুল আজিজ। শুধু তাই নয়, তিনি বাংলাদেশি এনআইডি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের আউটসোর্সিং কর্মী হিসেবেও চাকরি করছেন।

পরিচয় গোপন করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গাদের বিদেশ যাওয়ার অভিযোগও দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। এবার কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে পরিচয় গোপন করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়ে আব্দুল আজিজ পরিবেশ অধিদফতরের আউটসোর্সিং কর্মী হিসেবে চাকরি করছেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আব্দুল আজিজ বর্তমানে সেন্টমার্টিন বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কর্মী এবং পাশাপাশি জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের মেরিন পার্কে আউটসোর্সিং কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজিজকে এনআইডি তৈরি করতে সহযোগিতা করেছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আব্দুর রউফ।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুল আজিজ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক মো. আব্দুলের ছেলে। ১৯৯২ সালে তার বাবা স্ত্রীকে নিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন। পরে ২০০০ সালে তার মৃত্যু হয়। তখন আজিজের বয়স ছয় বছর। ২০০১ সালের দিকে আব্দুলের স্ত্রীকে বিয়ে করেন সেন্টমার্টিনের কোনপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলী আহমদ।

সম্প্রতি, ২০১৭ সালে আলী আহমদকে বাবা এবং তার স্ত্রী নুর নাহারকে মা দেখিয়ে জন্ম নিবন্ধন তৈরি করা হয়। সেই বছরই এনআইডি করা হয়, যেখানে জন্মসাল উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি; অর্থাৎ যে বছর তার বাবা মিয়ানমার থেকে আসে, তখন আজিজের বয়স নয়। এনআইডি কার্ডে উল্লেখিত নাম প্রকৃতপক্ষে তার জন্মদাতা পিতা নয়।

পালক পিতা আলী আহমদ বলেন, “আজিজের বাবা আব্দুল মারা যাওয়ার এক বছর পর ২০০১ সালে আমি নুর নাহারকে বিয়ে করি। তখন আজিজের বয়স সাত বছর হবে। আজিজ আমার ছেলে নয়, মূলত মিয়ানমারের নাগরিক আব্দুলের ছেলে। দালাল চক্রের সঙ্গে মিলে আমাকে বাবা বানিয়ে এনআইডি করেছে বলে শুনেছি। তবে কারা কীভাবে করেছে, তা আমি জানি না।”

রোহিঙ্গা হাতে পর্যটকরা কতটুকু নিরাপদ, সেই বিষয়ে স্থানীয়দের ভাবিয়ে তুলেছে। পরিচয় গোপন করে রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য এক ধরনের হুমকি মনে করছেন সচেতন মহল।

আজিজ রোহিঙ্গা নাগরিক হয়েও স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের সহায়তায় এনআইডি বানিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাচ্ছেন, যা প্রশ্ন তুলেছে জনমনে। জেলা প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির অধীনে সেন্টমার্টিনে বিচ কর্মীর পাশাপাশি পরিবেশ অধিদফতরের মেরিন পার্কে আউটসোর্সিং কর্মী হিসেবে কাজ করছেন।

সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী এটি অনুমোদিত নয়। এই কারণে ২০২২ সালের শেষের দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় তাকে সাময়িক চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিল। পাঁচ-ছয় মাস পর পরিবেশ অধিদপ্তরে চাকরি করবে না মর্মে অঙ্গীকার দিয়ে আবার বিচ কর্মী হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু কয়েক মাস না যেতেই পুনরায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজে জড়িয়ে পড়েন।

পরিচয় গোপন করে রোহিঙ্গা যুবকের এনআইডি করার বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “ভুল তথ্য দিয়ে এনআইডি তৈরি করা অপরাধ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *