শ্বাসরুদ্ধ করে সাইফুলকে হত্যা

কামরুল ইসলাম:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সাইফুল ইসলাম (৩৩) নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তাকে বাড়ির কাছে একটি বিলের মাঝে ফেলে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন। খবর পেয়ে ভোররাতে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।

এর আগে সোমবার দিবাগত গভীর রাতে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য বাড়িতে পুলিশ যায়। এ সময় বাড়িতে তল্লাশি করেও তাকে না পেয়ে পুলিশ ফেরত আসে। এর কয়েক মিনিট পর হেলমেট পরিহিত একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী সাইফুল ইসলামকে ধাওয়া দিয়ে ধরে পাশের বিলের মাঝে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তারা।

গত সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম মাইজ কাকারা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত সাইফুল ইসলাম ওই এলাকার শাহ আলমের পুত্র। পরিবার সূত্র জানায়—সাইফুল ইসলাম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি পেশাগত কাজের সুবিধার্থে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চকরিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাজধানী পাড়ায় বসবাস করতেন। সে সুবাদে তিনি পৌরসভা যুবদলের ওই ওয়ার্ডের সিনিয়র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। কয়েক বছর আগে সাইফুল নিজ এলাকা কাকারার পশ্চিম মাইজ কাকারায় সপরিবারে বসবাস শুরু করেন। কাকারা ইউনিয়ন বিএনপির নেতা জয়নাল আবেদীনও এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নিহত সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রিনা আক্তার অভিযোগ করেছেন, তাদের বাড়ির কাছের বাসিন্দা জামায়াত নেতা নুরুল ইসলামের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে কয়েকদিন আগে প্রতিপক্ষ আমজাদ হোসেনদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের সময় প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন সাইফুল ইসলামও। পরে জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম এক লাখ টাকার লোভ দেখিয়ে তার পক্ষে সাক্ষী দিতে বললেও সাইফুল রাজি হননি। এই কারণে জমি বিরোধের মামলায় তাকে চার নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পুলিশ আসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ১০–১২ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী মাথায় হেলমেট পরে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ সময় বাড়ির পেছন থেকে ধাওয়া দিয়ে সাইফুলকে দিগম্বর করে নিয়ে যায় এবং পাশের বিলের মধ্যে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশ ফেলে চলে যায় তারা।

পশ্চিম মাইজ কাকারা গ্রামের একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ চলে যাওয়ার পর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িতেও ঢুকে তল্লাশি চালায় এবং কিছু বাড়ি থেকে দামি মালামালও লুট করে। এই অবস্থায় রাতভর ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো পাড়ায়।

অভিযুক্ত জামায়াত নেতা নুরুল ইসলামের বক্তব্য নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলেও তা নেওয়া যায়নি। তার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি, এবং বাড়ির গেইটে তালা ঝুলানো ছিল।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনির হোসেন জানান, সোমবার দিবাগত রাতে মামলার আসামি সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ বাড়িতে গিয়েছিল। তাকে না পেয়ে পুলিশ চলে আসে। এরপর কী ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করা হবে। তিনি আরও জানান, ভোরে সাইফুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সাইফুলের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া না গেলেও মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। পরিবারের লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির পর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *