সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় গর্ভধারিণী মাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালো সন্তান

মোহাম্মদ হোসেন হ্যাপী: 

নারায়ণগঞ্জ নগরীর খাঁনপুর এলাকায় পৌত্রিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে ছেলের বিরুদ্ধে বৃদ্ধা মা আদালতে তোলা হওয়ার ঘটনা স্থানীয় সমাজে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। অভিযোগকারী পক্ষের মতে, সম্পত্তি লিখে না দেওয়ার বিনিময়ে নিজের গর্ভধারিণী মাকে সরাসরি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে—যা সামাজিক ও মানবিকভাবে নিন্দনীয় বলে এলাকাবাসী মনে করছেন।

ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রয়াত আলহাজ্ব আবু তাহের (পরিবার সূত্রে পরিচিত—আবু তাহের সাহেব) মৃত্যুর পূর্বে শহরের খাঁনপুরে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি জীবিত থাকতে পরিবারের জন্য দোকানপাট, বাড়ি-ঘর ও অন্যান্য সম্পত্তি রেখে গেছেন। আইনি উত্তরাধিকারের নিয়ম অনুসারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার—মৃতকের স্ত্রী ও তিন সন্তান—সেই সম্পত্তির অংশীদার হিসেবে তালিকাভুক্ত। অভিযোগে বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় সন্তানেরূপে আবুল বাশার জনি নামে ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন থেকেই জোর করে সম্পত্তি নিজের নিবে দাবি করে এসেছে এবং শেষপর্যন্ত মা ও অন্যান্য সহোদরদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন।

পরে অভিযোগকারী পক্ষ ও পারিবারিক সূত্র বলছে, ২০২৫ সালের ৫ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ চতুর্থ অতিরিক্ত সহকারী জজ আদালতে জনির পক্ষে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার এজাহারে তিনি তার মায়ের বিরুদ্ধে ‘সম্পত্তির অধিকার নিয়ে মিথ্যা দাবি’ ও ‘জালিয়াতি’ অভিযোগ এনেছেন। এ নোটিশের ফলে ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা মা ধরা পড়েন আদালতে—অবস্থাটি দেখে এলাকাবাসী গভীরভাবে বিব্রত ও বিব্রতবোধ করছেন। গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে—কোনো সন্তানের কি মা-বাবার প্রতি এমন কদর-অপরাধ করা উচিত?

বৃদ্ধা তাঁর আবেগ বিলীন কণ্ঠে আদালতে বলেন, “আমি জন্ম দিয়েছি, কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। আজ আমারই ছেলে সম্পত্তির লোভে আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। এই সম্পত্তির উপর আমারও অধিকার আছে—এবং আমার আরও দুই সন্তানও এর অংশীদার। আমি কখনো ভাবিনি আমারই সন্তান আমাকে এভাবে অপমান করবে।” তাঁর চোখে কান্না ও কণ্ঠে হাহাকার—এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।

পরিবার সূত্র আরো জানান, মৃত স্বামী জীবিত থাকাকালে একটি ওসীয়তনামা (ওসিয়ত সংক্রান্ত দলিল) করে যান। পরে ১১ আগস্ট (বছর উল্লেখ নেই) নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ওয়ার্ড কমিশনারের তত্ত্বাবধানে পারিবারিক বণ্টননামা সম্পন্ন হয়। সেই বণ্টননামার প্রসঙ্গও মামলায় আলোচিত হচ্ছে; কিন্তু জনি তা মানতে রাজি না হয়ে মা ও ভ্রাতৃবর্গকে বর্বরভাবে চাপ দেয়ার অভিযোগ পরিবারের।

অনেক প্রতিবেশী এবং এলাকাবাসী জনির এই আচরণকে সমাজে হতাশাজনক ও নিন্দনীয় বলে অভিহিত করেছেন। এক প্রতিবেশী, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন, “জনির মা-কে আমরা বহু বছরের পরিচিত। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক, ভদ্র ও সৎচরিত্রা। সম্পত্তির লোভে তিনি কীভাবে এমন কাজ করবেন—এটা আমাদের ধারণার বাইরে।”

এদিকে মামলার বিবরণে বাদীপক্ষের আইনজীবী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে স্থানীয় এক মানবাধিকার সংস্থা ইতোমধ্যে বৃদ্ধার পক্ষে তদবির শুরু করেছে। ওই সংস্থার নেতারা জানান, তারা এই মামলাটিকে সন্তানের হাত ধরে পিতামাতার অধিকার লঙ্ঘনের একটি গুরুতর দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন এবং পরিবারের পাশে থেকে আইনি সহায়তা প্রদান করবেন। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—“আমরা এই ঘৃণ্য কাণ্ডের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করব এবং যারা মা-বাবাকে সম্পদ-লাভের নামে ব্যবহার করে নৈতিকভাবে ভাঙচুর করে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা দাবি করব।”

স্থানীয় সমাজ নেতারা বিষয়টি দ্রুত ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে ও পরিবারের মধ্যে শান্তি স্থাপনে হাতেগোনা প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, পারিবারিক বিবাদ থাকলে সেটি আদালতের দ্বারস্থ করার আগে পারিবারিক সালিশ, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতা বা সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত—তবে কখনোই কুণ্ঠিত বৃদ্ধাকে মানহানির শিকার করে আইনের কোণের প্রবেশ করানো মানবিকতা-বিরোধী।

স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি; মামলার পরবর্তী পদক্ষেপ ও তদন্তের ফলাফল আদালতের মাধ্যমে প্রাপ্ত হলে পরবর্তীতে এখবর আপডেট করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *