স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর জোন-৭ এ নতুন যোগদান করেই সততা ও ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ইমারত পরিদর্শক মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন। যোগদানের পর থেকেই তিনি অবৈধ ভবন নির্মাণ, অননুমোদিত বিল্ডিং প্ল্যান, ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঘুষের মাধ্যমে গড়ে ওঠা দালালচক্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই রাজধানীর কোর্ট কাচারি এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী হাজী আব্দুল বারেক। দীর্ঘদিন ধরে রাজউকের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই ধরনের ভবন অনুমোদন ছাড়াই তৈরি হলেও বেশিরভাগ সময়ই তা উপেক্ষিত থাকত। কিন্তু এবার বিষয়টি নজরে আসে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড প্রে সোসাইটির। তারা জনস্বার্থে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
অভিযোগ পাওয়ার পরই জোন-৭ এর ইমারত পরিদর্শক মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেন এবং রাজউকের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন। তিনি জানান,
“রাজউকের আইন অমান্য করে কেউ যদি ভবন নির্মাণ করে, তা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন—আমি ব্যবস্থা নেব। হাজী আব্দুল বারেক আমাদের বিরুদ্ধে একটি রিট পিটিশন (নং ৯৭১৭/২৫) করেছেন, এতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে আমি যতদিন দায়িত্বে আছি, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে আপসহীন থাকব।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাজী বারেক বহু বছর ধরে কোর্ট কাচারি এলাকার আশপাশে অবৈধ দখল ও রাজউকের অনুমোদন ছাড়া ভবন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত। তিনি রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে ঘুষ দিয়ে অনুমোদন ‘ম্যানেজ’ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই অবস্থায় নতুন ইমারত পরিদর্শক শিহাব উদ্দিনের কঠোর অবস্থান দালালচক্র ও প্রভাবশালীদের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। ইতিমধ্যে তাকে নানা ধরনের হুমকি ও চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
রাজউকের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন জোনে দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে কোটি টাকার অবৈধ নির্মাণ কাজ চলেছে। এসব অনিয়মে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিদর্শক ও অথরাইজড অফিসাররা প্রায়ই চাপ ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের শিকার হন।
অন্যদিকে, রাজউকের জোন-৭ এ নতুন অথরাইজড অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছেন মোঃ ইলিয়াস, যিনি দীর্ঘদিন সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি জানান,
“রাজউকের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে আমাদের সকল কর্মকর্তাকে সৎভাবে কাজ করতে হবে। অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজউকের এই পদক্ষেপে সাধারণ মানুষ আশা করছে— রাজধানীর ভবন নির্মাণে দীর্ঘদিনের দালালচক্র ও দুর্নীতির অবসান ঘটবে। তবে কর্মকর্তাদের ওপর চাপ ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও এখন সময়ের দাবি।