নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকা ওয়াসার পতিত স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর সাবেক এমডি তাকসিম এ খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী উপসচিব (প্রশাসন-১) নুরুজ্জামান মিয়াজী এখনো দাপটের সঙ্গে বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন।
ঘুষখোর কর্মকর্তা হিসেবে কুখ্যাত নুরুজ্জামান মিয়াজী অফিসের ফাইল আটকে রেখে নিয়মিত টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘুষ কেলেঙ্কারির কারণে একবার ওয়াসা কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিল, পরে তদবির করে তিনি পুনর্বহাল হন। এমনকি পরীক্ষায় নবম স্থান অধিকার করেও ১৪ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে এ পদে আসীন হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি ঘুষে এতটাই আসক্ত যে, ঘুষ না পেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশও অগ্রাহ্য করে ফাইল ফেরত পাঠান।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাত পলাতক সাবেক এমডি তাকসিম এ খানের অন্যতম সহযোগী ও সুবিধাভোগী ছিলেন এই নুরুজ্জামান মিয়াজী। নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এখন তিনি প্লট, ফ্ল্যাট, বাড়ি ও বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন—যা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করলে তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন নুরুজ্জামান মিয়াজী। দলের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙিয়ে ওয়াসায় প্রভাব বিস্তার করতেন। ফেসবুকে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালাতেন এবং দলীয় নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবি নিয়মিত পোস্ট করতেন। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে কটূক্তি ও উস্কানিমূলক মন্তব্যও করতেন।
কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি আচমকা দিক বদলে এখন বিএনপির নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। ওয়াসার কথিত “জাতীয়তাবাদী কর্মচারী ইউনিয়ন”-এর স্বঘোষিত নেতা আজিজুল আলম খান ও মনির হোসেন পাটোয়ারীকে মোটা অঙ্কের ডোনেশন দিয়ে তাদের ছত্রছায়ায় আগের মতোই নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে এক সময় নুরুজ্জামান মিয়াজীকে প্রশাসন বিভাগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে আজিজ-মনির চক্রের সহায়তায় তিনি পুনরায় প্রশাসন বিভাগে পোস্টিং নিয়েছেন। এ জন্য ওই চক্রকে বড় অঙ্কের ডোনেশন দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়েরকৃত এক অভিযোগে নুরুজ্জামান মিয়াজীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের শাসনামলে তাকসিম এ খানের ছত্রছায়ায় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ সংবলিত বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে।
এই বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে পরবর্তী পর্বে।