সাভারে শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলা: অবশেষে প্রধান অভিযুক্ত সোহেল রোজারিও গ্রেপ্তার

আলমাস হোসাইন:

সাভারে বাসায় ফেরার পথে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) সাবেক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় আলোচিত মামলার প্রধান আসামি সোহেল রোজারিও (৩৭) অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) গভীর রাতে গাজীপুরের কালিগঞ্জ এলাকা থেকে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ও সাভার থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জালাল উদ্দিন।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রোজারিও সাভারের কমলাপুর গোয়ালিও এলাকার বাসিন্দা। এর আগে একই মামলার আরেক আসামি মিঠু বিশ্বাস (৪৪) কে রাজধানীর তেজগাঁও তেঁজকুনিপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বর্তমানে মিঠু বিশ্বাসকে দুই দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় তৃতীয় অভিযুক্ত বিপ্লব রোজারিও (৪০) এখনো পলাতক। তাকে ধরতে জেলা পুলিশের একাধিক টিম তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

ঘটনার পটভূমি

গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে সোহেল রোজারিও, মিঠু বিশ্বাস ও বিপ্লব রোজারিওর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই শিক্ষার্থী সাভার এলাকায় এক ছাত্রকে প্রাইভেট পড়ানোর পর বাসায় ফেরেন। কিন্তু বাসায় পৌঁছে দেখেন দরজায় তালা ঝুলছে। পরে তিনি জানতে পারেন, তাঁর মা তালা দিয়ে পাশের এক চা দোকানির কাছে চাবি রেখে গেছেন। দোকান থেকে চাবি নিয়ে বাসায় ফেরার সময় পথিমধ্যে সোহেল রোজারিও তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন।

এর কিছুক্ষণ পর বিপ্লব ও মিঠু নামে আরও দুই ব্যক্তি সেখানে এসে যোগ দেয়। তারা তিনজন মিলে ওই শিক্ষার্থীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সোহেলের বাসায় নিয়ে যায় এবং সেখানে সোহেল তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনার পর থেকেই তিন আসামি গা-ঢাকা দেয়। জেলা পুলিশের নির্দেশনায় ডিবি ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু হয়, যা শেষে প্রধান অভিযুক্ত সোহেল রোজারিওকে কালিগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।

পুলিশের বক্তব্য

সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা বলেন,

ঘটনার পর থেকেই প্রধান অভিযুক্তসহ অন্য আসামিরা আত্মগোপনে ছিল। আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে একাধিক স্থানে অভিযান চালাই। শেষ পর্যন্ত গাজীপুরের কালিগঞ্জ থেকে প্রধান অভিযুক্ত সোহেল রোজারিওকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই।

তিনি আরও জানান, “এই মামলার অন্য পলাতক আসামি বিপ্লব রোজারিওকেও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”

আইনি প্রক্রিয়া

গ্রেপ্তারের পর সোমবার দুপুরে প্রধান আসামি সোহেল রোজারিওকে আদালতে হাজির করা হবে। পুলিশ রিমান্ড আবেদন দাখিল করেছে বলে জানা গেছে। আদালতের নির্দেশে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে এলাকাজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, যেন এ ঘটনার দ্রুত বিচার সম্পন্ন হয় এবং নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *