সুনামগঞ্জে ডিসি–এডিসি অপসারণের দাবি ছাত্রজনতার মানববন্ধন

মো: ইসলাম উদ্দিন তালুকদার:

ছাত্রজনতা ও জুনায়িত গ্রুপ–জুলাই যোদ্ধার উদ্যোগে গত শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকেল তিনটায় সুনামগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্টে বড় মাত্রার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। কৃষক, ছাত্র, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত কর্মসূচির লক্ষ্য—জেলা প্রশাসক ড. ইলিয়াস মিয়া ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা।

সভায় সভাপতিত্ব করেন গুরুতর আহত জুলাই যোদ্ধা মোঃ জহুর আলী এবং পরিচালনা করেন জুলাই যোদ্ধা মোঃ আফতাব উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী, জেলা বিএনপির নেতা আব্দুল করিম পাটান, জেলা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহবায়ক শেখ এমদাদুল হক, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব মোঃ রিদওয়ানুল হক নিহালসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তি। এছাড়া বক্তব্য রাখেন জেলা ওয়ারিওর্স অব জুলাই-এর যুগ্ম আহবায়ক রেদোয়ান আহমেদ, জামাত নেতা মোঃ নাসির উদ্দিন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সহ-সভাপতি ফজলে রাব্বী মারুফ, আহত জুলাই যোদ্ধা শাহীন মিয়া ও আরও অনেকে।

বক্তারা অভিযোগ করেন যে, জেলা প্রশাসক ও এডিএম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে বিচারাধীন ৮৯/২০২৫ নং আদালত অবমাননা মামলার নাম রয়েছে। সেই সত্ত্বেও তারা উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে জেলাদীপ্ত রাজস্ব সম্পদ—যাদুকাটা বালি মহাল—বেআইনীভাবে ইজারা দিয়েছেন। বক্তাদের দাবি, যদি বৈধভাবে টেন্ডার করা হতো তাহলে সরকারি রাজস্ব আরও বেশি আসে; কিন্তু বেআইনী ইজারার ফলে রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।

অন্যান্য অভিযোগে বলা হয়, এডিএম রেজাউল করিম ৮0 লাখ টাকার রাজস্বমূল্যের ক্ষতিসাধন করে ভারতীয় চোরাই গরু পাচারের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত গরুচোরদের সাহায্য করেছেন। এনবিআরের চেয়ারম্যানের কাছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের তদন্ত রিপোর্ট দিলেও এখনও গরুচোর রেজাউলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি—এটি বক্তারা উল্লেখ করেন।

সভায় আরও উঠে আসে উপজেলা পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে সরকারি অফিসে প্রকাশ্যে বেঠক বসিয়ে, নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল ও ‘স্বৈরাচারের দোসরদের’ পুনর্বাসনের অভিযোগ। বক্তারা বলেন, জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্টরা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে রাজনৈতিক পুনর্বাসন ও দখলের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতিবাদকারীরা একটি আল্টিম্যাটাম দেন—আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযুক্ত ওই দুই কর্মকর্তাকে সুনামগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার না করা হলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। সভাপতির বক্তব্যে আহত জহুর আলী বলেন, তাঁর উপর হামলার ঘটনায় ওসি খালেদকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি এবং তিনি ও তাঁর সংগঠনের কর্মীদের উপর দমন-নিপীড়ন চলছে। তিনি জানান, repeated অভিযোগ সত্ত্বেও তারা ন্যায়বিচার পাননি।

সভায় অংশ নেওয়া বক্তারা দাবি করেন, জুলাই আন্দোলনের সময়ে জমায়েত ও সমর্থক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন ও অব্যাহত নির্যাতন চলছে—এমনটা সহ্য করা হবে না। তারা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে কড়া হস্তক্ষেপ ও অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শিগগিরই প্রত্যাহারের দাবি জানান।

মানববন্ধন শেষে অংশগ্রহণকারীরা সিদ্ধান্ত নেন—অপসারণ না হলে তারা আরও জোরদার কর্মসূচি ও প্রতিবাদ চালিয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *