নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন কাঁচপুর সাদীপুর মৌজা কাজিপাড়া বাজারের পূর্ব পাশে আদমপুর বাগ এস.এ-২, ৫, ৭, ২৮৮ নং আর.এস-১৭৬, ২৪৫ নং খারিজ। ৬৩০ নং খতিয়ানভুক্ত এস.এ-৬৬৫/১৩৫৫ আর.এস-৯৫৫, ৬৫ শতাংশ। সি.এস-এস.এ-৬৬৭/১০৫৭ আর.এস-৯৬০, ৬ শতাংশ। সি.এস-এস.এ-৬৬৭/৬৫৭ আর.এস-৯৬১, ২০ শতাংশ। সি.এস-এস.এ-৬৬৫/১৩৫৪ আর.এস-৯৫৯, ৬১ শতাংশ। সি.এস-এস.এ-৬৬৩ আর.এস-৯৫৩, ৪৪ শতাংশ।
সি.এস-৬৬৪ আর.এস-৯৫৪, ১১ শতাংশ। সি.এস-এস.এ-৬৬৭ আর.এস-৯৫৮, ১০৮ শতাংশ। সি.এস-এস.এ-৬৬৫ আর.এস-৯৫৬, ১০ শতাংশ। সি.এস-এস.এ-২৬৬ আর.এস-৯৫৭, ১৬ শতাংশ। সি.এস-এস.এ-২৫৭ আর.এস-৩৮০ বাড়ি, ১০ শতাংশ।
একুনে ১০ দফায় ৩৪১ শতাংশ জমি যেটির ক্রয়সূত্রে মালিক ছিলেন মৃত আমির খান। তিনি মারা যাওয়ার পর আইনগতভাবে এবং সামাজিকভাবেও এই সম্পত্তির মালিক হবেন তার ওয়ারিশগণ। কিন্তু মৃত আমির খানের জমি জোরপূর্বকভাবে জাল দলিল বানিয়ে ও প্লট আকারে প্রতারণামূলকভাবে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছেন ওই এলাকার আব্দুল মজিদ খান (৬৫) ও তার সন্ত্রাসী গ্রুপ—এমনটি অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসী জানান, কাঁচপুরের মঞ্জুরখোলা খানবাড়ীর আব্দুল মজিদ খান বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চলে। শুধু তাই নয়, দলের নামে মানুষকে ভয় দেখিয়ে জমি দখল করেন ও দালালি করে তারা চলেন। অভিযুক্ত মজিদ খান কিছুদিন আগে শীতলক্ষ্যা গ্রুপের মামলায় জেল খেটেছেন বলে জানান প্রতিবেশীরা।
এই আব্দুল মজিদ খান আমির খানের জমি তার নিজের সন্ত্রাসী বাহিনীকে দিয়ে মারধর, পিস্তল দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ৩৪১ শতাংশ জমি জালিয়াতি দলিলের ভিত্তিতে বিক্রি করছেন। তবে জালিয়াতি দলিলের মূল কাহিনিটি না জানলে কেউ বুঝতেই পারবেন না কি ঘটছে এই জমি নিয়ে!
জালিয়াতি দলিল কিভাবে করলো সেই গোপন তথ্য বললেন মৃত আমির খানের প্রথম স্ত্রীর দ্বিতীয় সন্তান জিহাদ খান (৩৯)। মৃত আমির খান জীবিত থাকাকালীন দুটি বিয়ে করেন এবং দুই স্ত্রীর ঘরে তার মোট ৫ টি সন্তান রয়েছে—তিনটি মেয়ে ও দুটি ছেলে এই জমির ওয়ারিশ। ১ম স্ত্রীর ঘরে ২টি ছেলে ও ২টি কন্যা সন্তান এবং ২য় স্ত্রীর ঘরে ১টি কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু ২টি বিয়ে করার পর কাজের জন্য আমির খান সৌদি আরব যান। সেখানে বাংলাদেশ থেকে কাজের ভিসায় যাওয়া রেহেনার সঙ্গে পরিচয় হয় এবং রেহেনাকে তার ব্যক্তিগত সময় কাটানোর জন্য নিয়ে আসেন বাংলাদেশে।
এরপর থেকে রেহেনার সঙ্গে মৃত আমির খান একই ঘরে থাকতে থাকেন। তবে তাদের মধ্যে কোনো শরীয়ত মোতাবেক বা সামাজিক স্বীকৃতির মাধ্যমে বিবাহিত সম্পর্ক স্থাপন করেননি; বরং অনৈতিকভাবে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে। রেহেনাকে নিয়ে আসার কিছুদিন পরই অসুস্থ হয়ে স্ট্রোক করেন আমির খান। স্ট্রোক করার ফলে তিনি প্যারালাইজড ও অচেতন হয়ে বিছানায় অসুস্থ অবস্থায় থাকাকালীন সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে রেহেনা তার হাতের ছাপ দিয়ে সম্পত্তি নিজের নামে করার উদ্দেশ্যে জাল দলিল তৈরি করেন। যেটি আমির খান মারা যাওয়ার পর সবার সামনে নিয়ে আসেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আমির খান মারা যাওয়ার পর তার জমি ওয়ারিশগণের অনুমতি ব্যতীত বিক্রি করতে যান রেহেনা। বিক্রিতে বাধা প্রয়োগ করেন মৃত আমির খানের প্রথম স্ত্রীর বড় ছেলে মাসুদ খান। রেহেনা বুঝতে পারেন ওয়ারিশগণ থাকাকালীন সে জমি বিক্রি করতে পারবেন না। তখন রেহেনা কিলার ভাড়া করে আমির খানের প্রথম স্ত্রীর বড় সন্তান মাসুদ খানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
২০১০ সালের জুলাই মাসের ১৩ তারিখ রাত আনুমানিক ৯:০০টার সময় ভাড়াকৃত কিলার সরাসরি মাসুদ খানকে বুকের নিচে গুলি করে কাঁচপুর এলাকায়। গুলি করার পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ৪ দিন পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন মাসুদ খান এবং তখন সে তার স্বীকারোক্তি প্রদান করে গিয়েছিলেন। ৫ম দিন মাসুদ খানকে ষড়যন্ত্র করে মেরে ফেলেছেন রেহেনা ও সহযোগীরা—এমনটি অভিযোগ করছেন ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনরা। এই হত্যাকাণ্ডের মামলা হওয়ায় রেহেনা আমির খানের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং সঙ্গে করে নিয়ে যায় তার জাল দলিলপত্র এবং স্বর্ণগয়না।
রেহেনা পালিয়ে গিয়ে আনুমানিক ৪ থেকে ৫ বছর তার প্রতারক ও দালাল চক্র আরো ভয়ংকরভাবে গড়ে তোলে। রেহেনার এই চক্রের মূল হলো— ১) আব্দুল মজিদ খান (৬৫), নিজ বাড়ি মঞ্জুর খোলা, খান বাড়ি, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ। ২) নিপুন খান—মজিদ খানের ছেলে, মঞ্জুর খোলা, খান বাড়ি, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ। ৩) মোহাম্মদ আলী ভূঁইয়া (৪২), পিতা-মৃত মোহাম্মদ। ৪) আ. কাদির (৪৮), পিতা-মৃত আবুল কাশেম। ৫) তাহের আলী (৬০), পিতা-মৃত কালাই প্রধান। ৬) মো. জুলহাস মিয়া (৫০), পিতা-মৃত জালাল উদ্দিন। ৭) সুলতান আহমেদ (৫২), পিতা-মৃত রেজাউল করিম। ৮) জাহাঙ্গীর (৫২), পিতা-মৃত আবুল কাশেম। ৯) ইকবাল হোসেন (৪৫), পিতা-মৃত জালাল উদ্দিন। ১০) আ. করিম (৫০), পিতা-মৃত মালেক। ১১) আফরোজা খানম। ১২) মোসাম্মৎ রিয়া খানম, পিতা মৃত আমিন খান।
আরো অনেকে—তারাই মূলত রেহেনার যোগসাজশে এই ৩৪১ শতাংশ জমি দখল ও প্রতারণামূলকভাবে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেন মৃত আমির খানের প্রথম স্ত্রীর দ্বিতীয় সন্তান জিহাদ খান।
রেহেনা বেগম আমির খানের সম্পত্তির জাল দলিলের জমি মানুষের কাছে শতাংশ অনুসারে প্রতারণা করে টাকা নিয়ে জমি দখল দিতে শুরু করেন। ওয়ারিশসূত্রে আমির খানের সন্তানগণ যখন তার এই অপরাধে বাধা দিতে আসেন তখন সে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে আমির খানের প্রথম স্ত্রীর দ্বিতীয় সন্তান জিহাদ খানের ওপর হামলা করান। রেহেনার সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে কোনভাবেই যখন ওয়ারিশগণ পেরে উঠতে না পারেন তখন দ্বারস্থ হন আদালতের। কিন্তু সোনারগাঁও থানা পুলিশের এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আঁধারেও ভূমিদস্যুরা রাতারাতি ওই জমি বিক্রি করে এবং কাজ করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
আমির খানের প্রথম স্ত্রীর বড় ছেলেকে হত্যার পর দ্বিতীয় ছেলে জিহাদ খান বাদী হয়ে দেওয়ানি মামলা করেন। যেটি মামলা নম্বর ৩০১। দেওয়ানি মামলা দায়ের করার পর আদালত থেকে ৩৪১ শতাংশ জমির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যাতে মামলাকৃত জমির ওপর কোন কার্যক্রম অর্থাৎ কোন ধরনের ভরাট, নির্মাণ, বসবাস না করা হয়।
কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারা এবং ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২১ ধারায় অপরাধ করেও আব্দুল মজিদ খান সন্ত্রাসী বাহিনী আবারও গুলি করে হত্যা করার হুমকি দেন জিহাদ খান ও তার পরিবারকে।
জিহাদ খান অভিযোগ করেন, মামলা ও অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য রেহেনা ও আব্দুল মজিদের বাহিনী তার বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়েছেন। গত ২৯/১১/২০২৫ তারিখেও আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা জমি প্রতারণামূলকভাবে বিক্রি করার জন্য ঢাকা থেকে জমি ক্রয় করার লোক নেন তারা। কিন্তু গণমাধ্যমকর্মীদের জমির ভিডিও করতে দেখে জমি ক্রয় করতে আসা ব্যক্তিরা বিষয়টি জানতে পেরে চলে যান।
মামলাকৃত ৩৪১ শতাংশ জমি আদালতে ১২ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ ধারা ১৫১ মোতাবেক একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ১০ এপ্রিল ২০২৬ তারিখ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যাতে এই জমিতে যেকোনো কার্যকলাপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ভুক্তভোগী জিহাদ খানের দাবি—তাদের ওয়ারিশসূত্রে পাওনা জমি তাদের সকল ওয়ারিশগণের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হোক। যারা প্রতারণার শিকার হয়ে জমির জন্য টাকা দিয়েছেন তারা যেন ন্যায্য বিচার পান—এটাই প্রশাসনের কাছে চাওয়া। এছাড়া অভিযুক্ত রেহেনা ও আব্দুল মজিদ খান বাহিনীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি করেছেন তিনি।
তবে এ বিষয়ে সোনারগাঁও থানার এএসআই সারোয়ার নিষেধাজ্ঞার কাগজ হাতে পেয়ে তদন্ত করতে আসলে কয়েকবার নিষেধ করে গেলেও থানা ও আদালতকে মানা হয়নি বলে অভিযোগ জিহাদ খানের।
এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এএসআই সারোয়ারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়—আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞার কাগজ পেয়েছি। যেই হোক আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতে পারবেন না। কেউ অমান্য করলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।