মোঃ সোহেল:
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের একজন প্রভাবশালী নেতা ও আলোচিত সাংবাদিক জাহেদুল করিম কচি–র বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের নির্যাতন, প্রতারণা, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, ক্ষমতার অপব্যবহার ও পারিবারিক সহিংসতার গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তাঁর স্ত্রী, প্রখ্যাত নজরুলসংগীত শিল্পী এবং জাতীয় কবি নজরুল মঞ্চের সভাপতি ফরিদা সুলতানা।
২৪ নভেম্বর বিকেল ৩টায় আগ্রাবাদের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন—
“আজ এই বক্তব্য দেওয়ার পর আমি বাঁচব কি না, তা জানি না। কিন্তু সত্য লুকিয়ে রাখতে পারলাম না।”
বিয়ের পর থেকেই ভয়াবহ নির্যাতন — ‘২৫ বছর ধরে নরক যন্ত্রণা’
লিখিত বক্তব্যে ফরিদা সুলতানা জানান—
১৯৯৪ সালে প্রতারণার মাধ্যমে কচি তাঁকে বিয়ে করেন।
বিয়ের পর থেকেই শুরু হয় অকথ্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
তিনি বলেন—
“আমার স্বামী নারীবাজি, মদ্যপান এবং নানা অনৈতিক কাজে জড়িত ছিলেন। বাধা দিলেই মারধর করত। আমার ওপর ২৫ বছর ধরে চলেছে নরক যন্ত্রণা।”
সাংবাদিক পরিচয়কে ‘ঢাল’ বানিয়ে তদবির বাণিজ্য — ফরিদার অভিযোগ
ফরিদা সুলতানার দাবি,
জাহেদুল করিম কচি তাঁর সাংবাদিক পরিচয়কে ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেন।
তিনি অভিযোগ করেন—
“প্রেসক্লাবে পদ পাওয়ার পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ঘুষ, তদবির বাণিজ্য, অনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে টাকা আয় করে আত্মীয়ের ব্যাংকে জমা করতেন।”
পরিবারের সদস্যদেরও সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন—
কচির পরিবারের কয়েকজন সদস্যও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাঁদের সহযোগিতায় তিনিও বারবার হামলা, হুমকি ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন।
মেয়ে নওরিনের স্বামীর মৃত্যুর পেছনে ‘অপরাধের ছায়া’
২০০৭ সালের ১৮ জানুয়ারি তাঁর মেয়ে নওরিন করিমের স্বামী রাহাতের রহস্যজনক মৃত্যুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন—
“রাহাতের মৃত্যুতে অপরাধমূলক উপাদান রয়েছে। সেখানে কচির পরোক্ষ প্রভাব ছিল বলেই আমি বিশ্বাস করি। এ ঘটনার প্রমাণ এখনো একজন আত্মীয়ের কাছে রয়েছে।”
‘জোর করে ইনজেকশন দিয়ে আমাকে পাগল সাজানো হতো’
এ অভিযোগ ছিল সংবাদ সম্মেলনের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অংশ।
ফরিদা সুলতানা বলেন—
“স্বামী, মেয়ে এবং এমনকি আমার বোন মিলেও আমাকে ইনজেকশন দিয়ে পাগল সাজানোর চেষ্টা করেছে—যেন আমার কথা কেউ বিশ্বাস না করে।”
তিনি দাবি করেন,
২০১৬ সালে পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পর কচিকে এক মাস কারাগারে থাকতে হয়।
আত্মরক্ষার আবেদন
সংবাদ সম্মেলনের শেষ প্রান্তে তিনি বলেন—
“আমার জীবন আজ হুমকির মুখে। আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জীবনের নিরাপত্তা ও ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।”