মোঃ জাহাঙ্গীর আলম:
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের শাকরাইল নতুন বাজারস্থ ‘মোকছেদ আলী একাডেমি’-তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা লঙ্ঘন করে নির্ধারিত পরীক্ষা না নেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, নন-এমপিওভুক্ত এ “মোকছেদ আলী একাডেমি” প্রায় এক বছর আগে স্বীকৃতি পেলেও অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা রাষ্ট্রীয় নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। ২৬ জুন থেকে অন্যান্য স্কুলে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলেও, ওই বিদ্যালয়ে কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি কিন্তু ফি আদায় করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নার্গিস আক্তার, সহকারী শিক্ষিকা ও পরীক্ষার নিয়ন্ত্রক সেতু করিম এবং স্কুলের সভাপতি নাজীর আহম্মেদ টিপুর নেতৃত্বে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে না জানিয়েই পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। এতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
টাকা নিয়েও পরীক্ষা নেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, নির্ধারিত ফি পরিশোধ করার পরও তাদের পরীক্ষা নিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমার কাছ থেকে সিলেবাস বাবদ ২০০ টাকা, পরীক্ষার জন্য ৪০০ টাকা এবং অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার জন্য আরও ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট টাইমে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।”
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সপ্না জানান, “আমার কাছে ৪০০ টাকা চাওয়া হয়। আমি ৩০০ টাকা দিলে বলা হয়, বাকি টাকা না দিলে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না।”
সিলেবাস, ফি ও পরীক্ষার নামে অনিয়ম
জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সিলেবাস বাবদ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা এবং ৩০ নম্বরের পরীক্ষার জন্য ৪০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শিক্ষা এখন যেন বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়েছে। পরীক্ষার নামে টাকা আদায় ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত করা অত্যন্ত নিন্দনীয়।”
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবস্থান ও দোষ স্বীকার
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নার্গিস আক্তার দোষ স্বীকার করে জানান, “নীতিমালা ভঙ্গের বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমাকে মৌখিকভাবে বৃহস্পতিবার শোকজ করেছেন এবং আজ লিখিত শোকজ দেওয়া হবে, এটার জবাব আমি উপজেলায় দেব।”
এদিকে সহকারী শিক্ষিকা সেতু করিম জানান, “সিলেবাস ও ফি আদায়ের দায়িত্ব ক্লাস শিক্ষকদের। আমাকে কর্তৃপক্ষ বলেছে টাকা নিতে—আমি শুধু সেই নির্দেশ পালন করেছি।” এভাবেই দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি নাজীর আহম্মেদ টিপু মুঠোফোনে সাংবাদিককে অবমাননাকর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) নার্গিস সুলতানা মুঠোফোনে বলেন, “আমি এখনো পর্যন্ত জানি না, শিবালয় শিক্ষা অফিসে কর্মরত উপজেলা একাডেমিক কর্মকর্তা রাশেদ আল মাহমুদের কাছে জানবো সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য।”
জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আমীর হোসেন বলেন, “এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কেউ অবগত করেনি, আপনি এই প্রথম জানালেন। আমি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলবো।”