স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর উত্তরায় সরকারি জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, ফুটপাত দখল করে দোকানপাট বসিয়ে চাঁদা আদায়, ক্যাবল বাণিজ্য, ইন্টারনেট লাইন দখল, পরিবহনে চলছে চাঁদা আদায়। বৈচিত্র্যময় নানা নিয়ন্ত্রণ বাণিজ্য নিয়ে চলছে দেদারসে চাঁদাবাজি। অভিযোগ আছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য খসরু চৌধুরীর (এমপি) ছত্রছায়ায় জনপ্রতিনিধিরা চালাচ্ছেন এসব কাজ। এমপি খসরু চৌধুরীর সাথে পুরানো অপরাধীরা তার সাথে ছবি তুলে এসব চাঁদা আদায় কায়েম করছে।
উত্তরা আব্দুল্লাপুর বাসস্ট্যান্ডটি পুরান ও জন যাত্রী এলাকা হওয়ায় প্রায় সকল পরিবহন মালিকদের কাউন্টার আছে টিকেট বিক্রি করার জন্য । প্রতি কাউন্টার থেকে প্রতিদিন ৫শত টাকা করে আদায় করে নতুন টিআই মেহেদী আসার পর থেকে , কারন চাঁদাবাজ নুরুকে কথা দিয়েছে অলিখিত ভাবে এসি, ডিসি ম্যানেজ করবে টিআই মেহেদী । ভ্রাম্যমান গাড়ী থেকে প্রতিদিনি চাঁদা আদায় করে এক সময়ের চা দোকানদার নামে পরিচিত বর্তমানে পরিবহন চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত নুরু নেতৃত্বে কয়েকজন সন্ত্রাসী প্রতিদিন কাউন্টার ও পরিবহন থেকে লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করে । আর নুরু এই চাঁদার টাকা ৫০% করে ভাগ করে । ৫০% দেয় আব্দুল্লাহপুর টিআই এর নেতৃত্বে ট্রাফিক বিভাগকে ,সে টাকা টিআই ভাগ করে দেয় সার্জেন্ট থেকে ডিসি পর্যন্ত । যার কারনে নুরুর চাঁদাবাজিতে ট্রাফিক বিভাগ দেখেও না দেখার ভাঁনধরে থাকে ।
সরকারি জমি দখল করে চলছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, ফুটপাত দখল করে দোকানপাট, ক্যাবল বাণিজ্য, ইন্টারনেট লাইন দখল, অবৈধ অটোরিকশা, লেগুনা চলার বিনিময়ে চাঁদাবাজি।
রাজধানীর উত্তরা আব্দুল্লাহপুর এলাকার মাছের আড়ৎটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে। এ আড়ৎ পরিচালনায় এসেছে তিনজনের নাম। মৎস্যজীবী লীগের রাম বাবু, ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার, ৪৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোতালেব মিয়া। যারা তিনজনই আবার এমপির কাছের লোক হিসেবে পরিচিত। দখলদারিত্ব করে চলছে মাছের বাজার। ৪৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোতালেব মিয়া প্রতিনিধিকে ফোনে বলেন, আব্দুল্লাহপুর এলাকার মাছের আড়ৎটিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা থাকলেও থাকতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা কি শুধু আপনার মার্কেটের সামনেই, নাকি ভেতরেও জায়গা আছে- এমন প্রশ্নের জবাবে মোতালেব মিয়া আরও বলেন, জায়গা থাকতেই পারে, সেটা তো থাকতেই পারে। সরকারি জায়গা, মনে করেন আপনার জায়গার পেছনে যদি সরকারি জায়গা থাকত তো, তাহলে কী আপনি বাদ দিয়া খাইতেন (খেতেন)। না অন্য কাউকে দিয়ে দিতেন? তাহলে কথা হলো সরকারি জায়গার পেছনে যদি কারও জায়গা থাকে, তাহলে সেটা তারা নিতে পারেন বিষয়টি কী এমন? কাউন্সিলর মোতালেব মিয়া জানান, মনে হয় তো তাই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখলের কথা নিজেই জানান কাউন্সিলর মোতালেব মিয়া। এক দোকানদার বলেন, মাসে ৫৫০/৪৫০/৩৫০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয় আমাদের। সরকারি জায়গা এটা আমরা জানি। আবার রাস্তাজুড়ে দেদারসে চলছে নিষিদ্ধ বাহন লেগুনা এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। যার পেছনেও নাম আসছে ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার খানের।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, গাড়িপ্রতি ৪৫০ করে টাকা দিতে হয়। নেতারা আমাদের কাছ থেকে টাকা নেন। প্রতিমাসে ১ হাজার টাকা করে কার্ডের বিল দিতে হয়। নাম প্রকাশ ও ক্যামেরায় চেহারা দেখাতে রাজি না হয়ে একজন জানান, কাউন্সিলর আফসার খানসহ আরও বেশকিছু লোক আছেন, তাদের তত্ত্বাবধানে হয় চাঁদাবাজি।
বাদ নেই ময়লা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ, ডিস লাইন ও ইন্টারনেট লাইনের নিয়ন্ত্রণও। অভিযোগ আছে এসব নিয়ন্ত্রণে কাজ করে খসরু চৌধুরীর পিএস মোস্তাফিজুর রহমান, সহকারি মোহাম্মদ তৌফিক এবং খসরু চৌধুরীর হাসপাতালে কর্মরত ফয়সাল। এমপির পিএস মোস্তাফিজুর রহমানও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য খসরু চৌধুরীর আন্ডারেই তো অনেক চাঁদাবাজ বসবাস করেন। যেমন ৪৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোতালেব মিয়া। তিনি তো কুখ্যাত চাঁদাবাজ। কাঁচাবাজার ও মাছবাজার দখল করে খাচ্ছে। তার ছেলে হেলাল, তার ডিসের ব্যবসা আছে। এগুলো লুটপাট করে খাচ্ছে। চাঁদাবাজি তো তারাই করেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, খসরু চৌধুরী এসব চাঁদাবাজদের কথার বুলিতে টিকতে পারছেনা । আগে দেয়া হয়েছে ৩ হাজার টাকা করে, বর্তমানে তার নাম বিক্রিকরে মাসে ৪ হাজার টাকা করে দিতে হয় ( অথছ সংসদ সদস্য জানে না )।
উত্তরা ১২নং সেক্টর সিটি করপোরেশনের অফিসের ঠিক উল্টো পাশেই চওড়া রাস্তার তিনভাগের দুইভাগ দখল করে চলছে ভ্রাম্যমাণ দোকান। এটির নিয়ন্ত্রণ আবার কেসি ফাউন্ডেশন অর্থাৎ খোকা চৌধুরী ফাউন্ডেশনের মিলনের হাতে। উত্তরা ৩নং সেক্টরের আমির কমপ্লেক্সের পশ্চিম পাশ হতে রাজলক্ষ্মী পর্যন্ত পুটপাত দখল করে এসব চাঁদা আদায় ।
নির্বাচনের পরেই মোটামুটি বেশিরভাগ দখলদারিত্ব ও নিয়ন্ত্রণ বাণিজ্যে নাম আসছে নবনিযুক্ত এমপির ঘনিষ্ঠজনদের ।