চারদিন ধরে অরাজকতা চলছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের হেড অফিসে দফায় দফায় হামলা করছে দুষ্কৃতকারীরা,সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ

স্টাফ রিপোর্টার

: পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে টানা চারদিন ধরে চলছে অরাজকতা,হামলা,জোরপূর্বক দাবি আদায়ে এমডির সাক্ষর নেওয়াসহ বিভিন্ন উশৃংখল কর্মকান্ড।প্রধান কার্যালয় এমন উশৃংখলতায় যেমন নতুন তৈরী সরকারকে বিপদে ফালানোর কুচেষ্টা চলছে, তেমনি সারাদেশে ব্যাংকটির সুনাম নষ্টসহ ব্যাংকিং কাজে ব্যঘাত কটছে বলে মনে করেন ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।তারা এমন উশৃংখলতা সৃষ্টিকারী এসপিও,পিও,সিবিএ নেতাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান এবং বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ঘটনার শুরু – গত রবিবার এসপিও, পিও এবং সিবিএ’র কয়েক নেতাদের সাথে সাড়ে তিন কোটি টাকার একটি প্রিন্টিং মেশিন কেনা নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব ;জানান এমডি জামিনুর রহমান। এরপর অফিস শুরুর সময় থেকে এসপিও’র নির্দেশে সিবিএ’র একটি গ্রুপটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মো. জামিনুর রহমান ও সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া তানহার উপর চরাও হন।এর প্রেক্ষিতে সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া তানহার লাঞ্ছিত হবার ভয়ে সরে গেলে এমডির উপর ভর করেন সিবিএ’র ওই দুই নেতাসহ তাদের অনুসারীরা।দিনভর চলে এমডিকে জোরপূর্বক চাপ দিয়ে সুবিধা গ্রহন করার একেকটি অফিস আদেশ সাক্ষর। আবার একইদিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মো. জামিনুর রহমান ওইসব আদেশ বাতিল করে চিঠি ইস্যু করতে থাকেন।
এসব জোরপূর্বক আদায় করা অফিসিয়াল আদেশগুলোর মধ্যে পদোন্নতি,সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মাঠ সহকারীকে বিনা তদন্তে মামলা নিষ্পত্তি করা,অফিসে সিবিএ সংগঠনকে কক্ষ বরাদ্দ,বদলী আদেশ প্রদান এবং বদলী আদেশ বাতিল,নতুন করে সায়িক বরখাস্ত করাসহ অন্যান্য চিঠি। প্রতিবেদকের হাতে এসেছে সেসব চিঠি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মো. জামিনুর রহমানের দেওয়া বিজ্ঞপ্তি। একইদিনে এমডি জামিনুর রহমানকে জিম্মি করে সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া তানহার তালা দেয়া কক্ষ ভাঙ্গায় সিবিএ নেতারা ;এসময় ভিডিওচিত্রে রোবেল সহ অন্যান্যদের দেখা যায়। দিন শেষে এমডি জামিনুর রহমান যে বিজ্ঞপ্তি দেন ওয়েবসাইটে তাতে দেখা যায় এমডি জামিনুর রহমান লিখেছেন তাকে জোর পূর্বক এসব চিঠি সাক্ষর করিয়েছেন এসপিও,পিওর সাথে মিলে সিবিএ’র এসব ব্যক্তিরা। সেখানে আরও বলা হয় অভিযুক্তদের উশৃংখলতা এবং অরাজকতার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করেছেন তিনি। একাধিক সমর্থিত সূত্র থেকে জানা যায়,এসপিও,পিও সিবিএ’র কয়েকজন সা‌ড়ে ৩ কো‌টি টাকার প্রিন্টিং, স্টেশনারী টেন্ডার সি‌বিএর উক্ত গ্রুপ দাবি ক‌রেন। তা‌তে রা‌জি না হওয়া‌তে শুরু হয় এই তান্ডবলীলা।
ঘটনার দ্বিতীয় দিন সেমবার –
সাধারন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থেকে পাওয়া অভিযোগ এবং কর্তৃপক্ষে ভাষ্য অনুযায়ী,সিবিএ এবং এসপিওর গুটি কয়েক ব্যক্তি নিয়ে গঠিত গ্রুপটি গণমাধ্যমে প্রেস রিলিজ দেন এবং এমডিসহ একাধিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নামসর্বস্ব একটি মানববন্ধন করেন।এরপর ব্যাংকিং সেবা ব্যহত ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সাময়িক বরখাস্ত হন কয়েকজন এসপিও অফিসার।দিনভর চলে অস্থিরতা,ওইদিন এমডি জামিনুর রহমান অফিসে ঢুকতে পারেননি এবং এসপিও,পিও,সিবিএ কে দায়ী করেন তিনি।
ঘটনার টানা তৃতীয় দিন —
অরাজকতার তৃতীয় দিনে মাঠে নামে সাধারন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে এবং অরাজকতা বন্ধ করতে সিবিএর ২২১৪ সংগঠনের নেতা কর্মীরা।এসময় এসপিও, পিও অফিসারদের মদতে রোবেল-এনামুল গ্রুপটি তাদের উপর হামলা, মারধর ও এমডিসহ প্রতিবাদীদের গালাগাল করে।এসময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের গাড়ি চালকের মাথা ফেটে গুরুতর আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ভর্তি করানো হয়।
চতুর্থ দিন ঘটনাঃ
চতুর্থ দিন অভিযুক্তরা সন্ত্রীর মত লাঠি, দেশীয় অস্রসহ মহড়া দেয় এবং কথিত মানববন্ধন করে।এসময় ব্যাংকের লোকজন ধাওয়া দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।এসময় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও সন্ত্রাসীদের ন্যায় তারা সাধারন অফিসারদের উপর আবার হামলা করে। সাধারন কর্মকর্তা কর্মচারীরা এ ঘটনার পর থেকে আগামী রবিবার পর্যন্ত ব্যাংকে অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি সাধারনদের–
গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য যে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে সে অনুযায়ী জড়িতদের মধ্যে এসপিও, পিও,এবং সিবিএ নেতারা জড়িত ছিলেন এ ঘটনায়। এর মধ্যে,আবদুল আজিজ বেপারী, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, ঢাকা প্রধান কার্যালয়; মোঃ সাজ্জাদ হোসেইন তামিম, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, ঢাকা প্রধান কার্যালয় ঢাকা; মোঃ এনামুল হক, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, ঢাকা প্রধান কার্যালয় ঢাকা; রাজীব বিশ্বাস, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, ঢাকা প্রধান কার্যালয় ঢাকা; জামাল উদ্দিন, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, ঢাকা প্রধান কার্যালয় ঢাকা; রুবেল মিয়া, প্রিন্সিপাল অফিসার, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, ঢাকা প্রধান কার্যালয় ঢাকা; এস এম সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, ঢাকা প্রধান কার্যালয় ঢাকা; রতন চন্দ্র রায়, অফিসার সাধারণ,পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, ঢাকা প্রধান কার্যালয় ঢাকা,মোঃ রোবেল হোসেন, সাধরান সম্পাদক, সিবিএ, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক,(সিন্ডিকেট টিমের ফিল্ড অপারেশন লিডার),মোঃ এনামুল হক, সভাপতি, সিবিএ, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক,মো: শামছুল আরেফিন, সহসভাপতি, সিবিএ, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক; এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের দাবী– উশৃংখলতা সৃষ্টিকারী অভিযুক্ত সিবিএ ২২১৫ সংগঠনের দাবী এমডি জামিনুর রহমান ও সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া তানহারে পদত্যাগ।পদত্যাগের কারন হিসেবে তারা বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়মের কথা বললেও গণমাধ্যমকে কোন এর সংশ্লিষ্ট কোন প্রমাণ,নথি আপাতত দিতে পারেননি তারা।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে সিবিএ নেতা রোবেল-এনামুল গ্রুপটির নামে একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক অনুসন্ধান শুরু হয়।যা চলমান আছে।,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *