প্রভাস চক্রবর্ত্তী :
সনাতনীদের দাবী আদায়ের লক্ষ্যে লালদিঘি পাড়,জন সমুদ্রে পরিণত। দলে দলে যোগদানের মধ্যে দিয়ে আবারও প্রমানকরলো সনাতনীদের একতার কথা।
বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেছেন, ‘যদি এই দেশ থেকে আমাদের উচ্ছেদ করে কেউ শান্তিতে থাকতে চান, তাহলে এটা আফগানিস্তান-সিরিয়া হবে। গণতান্ত্রিক শক্তি থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্য হবে।’
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকালে চট্টগ্রামের লালদিঘি মাঠে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর মন্দির, হিন্দু বাড়িঘরে হামলা, শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগের অভিযোগ করে এর প্রতিবাদে এবং আট দফা দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ মহাসমাবেশ আয়োজন করা হয়। এসময় হাজার হাজর মানুষ উপস্থিত লক্ষ্য করা গেছে।
অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘যেই মঞ্চ থেকে ছয় দফা দাবি ঘোষিত হয়েছে, সেই লালদিঘীর ময়দানে আজ হিন্দু সনাতনদের গণজোয়ার এসেছে। আমাদের যত বেশি নির্যাতন করা হবে তত বেশি আমরা এক হবো। এই ঐক্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে বাংলার কৃষ্টি কালচারের ঐক্য। এই ঐক্য কোনোভাবে খণ্ডিত করা যাবে না। আট দফা দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে ১৯ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৯৩ জন হিন্দুকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যারা রাজনীতি করে না, মানবতার কথা বলছে, তাদের মামলার আসামি করা হচ্ছে। সংখ্যানুপাতিক হারে হিন্দুদের সংসদে আসন বিন্যাস করতে হবে। প্রয়োজনে ভোট বর্জন করবো, গণতন্ত্রের নামে প্রহসন চাই না। ১৫ হাজার কোটি টাকা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের মাত্র ২০০ কোটির মতো সংখ্যালঘুদের জন্য কেন?
‘আট দফা দাবি আদায় না করা পর্যন্ত প্রতিটি বিভাগে মহাসমাবেশ হবে, জেলায় জেলায় সমাবেশ হবে। এরপর ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ হবে।’
এ সময় অন্য বক্তারা বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৩ বছরে সনাতনীরা শুধু অবহেলিত ছিল। সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু সনাতনীদের ভাগ্য বদলায় না। যেই সরকার ক্ষমতায় থাকে তারা সনাতনীদের দুঃখ-দুর্দশাকে লুকানোর চেষ্টা করে। সনাতনীদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়, নির্যাতন লুকিয়ে স্বাভাবিকতার কথা বলে। গত ৫৩ বছরে এ দেশে হওয়া হিন্দু নির্যাতন, হত্যার কোনও বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে উৎসাহিত হয়েছে। প্রতিবার ভোট পরবর্তী বা ক্ষমতার পালাবদলের সময় নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে হিন্দুদের ওপর।’
তাদের আট দফা দাবিগুলো হলো– সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শান্তি প্রদান; ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা; অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন; সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন; হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা; ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন; প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা রুম বরাদ্দ; সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন; শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি।
স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারীর সঞ্চালনায় এই মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন– শংকর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ তপনান্দ গিরি মহারাজ, বোয়ালখালী,গোমদন্ডী,যোগাশ্রমের অধ্যক্ষ ছত্রেশ্বরানন্দ সরস্বতী মহারাজ, পটিয়া পাচোরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ রবীশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত সচিদানন্দ পুরী মহারাজ, শ্রীমৎ মুরারী দাস বাবাজী, তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রাঞ্জলানন্দ পুরী মহারাজ,পূর্ব গোমদন্ডী হতে হিন্দু, বৌদ্ধ খৃষ্টাব্দ ঐক্য পরিষদ দক্ষিণ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিব বৈদ্য সরোজ চৌধুরী, সাংবাদিক প্রভাস চক্রবর্ত্তী, বিকাশ কান্তি শিকদার কানু মহাজন, বনস্পতি বিশ্বাস,রুনু লোকনাথ মন্দির উৎস পরিচালনা কমিটির সাধরণ সম্পাদক সুমন কর, শিক্ষক,উৎফল চৌধুরী,রণী চৌধুরী, কিশোর দে, জনি দাশ, অন্তর ধর, পান্না ধর,শিক্ষিকা মেরী দত্ত, ডেইজি ভট্টাচার্য্য,উজ্জ্বল, চিন্ময় চৌধুরী,আরো অন্যান নেতৃবৃন্দ।