প্রভাস চক্রবর্ত্তী:
আজ কালুরঘাট সেতু হালকা যানচলাচল খুলে দেওয়া হচ্ছে, যাতে ভারী কোন যানচলাচল করতে না পারে তারজন্য সেতুর দুই দিকে দেয়াহয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
১৫ মাস বন্ধের পর সংস্কার শেষে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত ৯৩ বছরের পুরনো চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু। রবিবার সকালে সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মানুষের প্রতিদিনের দুর্ভোগের অবসান হবে।
এদিকে প্রথমবারের মতো ওয়াকওয়ে তৈরি করায় সবার মাঝে কৌতুহল বেড়েছে। বেশীরভাগ মানুষ ওয়াকওয়ে উপর পায়ে হেঁটে পাড়াপাড়ে আনন্দ পাচ্ছে। নদীর শীতর বাতাসে মন ভরে যায়।
একজন পথচারী শেখর চৌধুরী এ প্রতিবেদনে জানান,যারা সেতুর উপর দিয়ে হাঁটছে, তাঁদের উদেশ্য বলতে চাই,আপনাদের নিরাপত্তার জন্য এ ওয়াকওয়েটি তৈরী করা হয়েছে। এখন কক্সবাজারগামী কয়েকটি রেল চলাচল করছে,তাই নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ ওয়াকওয়ে দিয়ে পাড়াপাড় হওয় উচিত বলে আমি মনে করছি।
এক কালুরঘাট সেতু দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়ার মানুষ চট্টগ্রাম শহরে আসা-যাওয়া করেন। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। রবিবার সকালে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দিতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল গাড়ি চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
কর্ণফুলি নদীর উপর স্থাপিত একটি পুরাতন রেল ও সড়ক সেতু যা একসময় চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাংশকে দেশের অবশিষ্টাংশের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার একমাত্র উপায় হিসেবে বিবেচিত ছিল। ১৯৩০ সালে কর্ণফুলি নদীর উপর দিয়ে জানালীহাট এবং গোমদন্ডী রেলস্টেশনের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে স্টিল কাঠামোর উপর নির্মিত একটি সাধারণ সেতু হিসেবে কালুরঘাট সেতুটি তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ২৩৯ মিটার।
চট্টগ্রাম ও দোহাজারী থানার মধ্যে ট্রেন চলাচলের উদ্দেশ্যে ১৯৩১ সালে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের একত্রিশ বছর পর ১৯৬২ সালে জনগণের দুর্ভোগ বিবেচনা করে সেতুটিতে পাটাতন স্থাপন ও কার্পেটিং করে এটিকে রেলসেতুর পাশাপাশি একটি সড়ক সেতুতে রূপান্তর করা হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের জন্য সেতুতে বড় ধরনের সংস্কারকাজের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। কাজ শুরু হয় গত বছরের ১ আগস্ট। এ জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে ৪৩ কোটি টাকার চুক্তি করে রেলওয়ে।
চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থ ছাড়ে জটিলতা, বৃষ্টিসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় সেতুর সংস্কারকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি। এরপর ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে বন্ধ থাকে অন্যান্য যান চলাচল।
অবশেষে কারিগরি সব দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আজ রোববার সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য গত ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে কালুরঘাট রেল সেতু সংস্কার কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন রেল সচিব আবদুল বাকী। সেসময় তিনি বোয়ালখালী প্রেসক্লাবরের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সংস্কার শেষ হলেই যান চলাচল স্বাভাবিক হবে। ধারণা করছি অল্পকিছু দিনের মধ্যেই যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।