স্বাধীন ইসলাম ডেস্ক:
গভীর রাতে মাঝে মাঝে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। আমরা হয়তো সময় দেখি, পানি খাই, প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করি, তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ি। এ সময়টি আল্লাহর কাছে দোয়া করার, কিছু চেয়ে নেওয়ার একটি সুবর্ণ সময় এটা অনেকেই জানি না বা ভুলে যাই।
হাদিসে এসেছে, রাতে ঘুম ভেঙে গেলে যদি কেউ আল্লাহর প্রশংসা সম্বলিত বিশেষ একটি দোয়া পাঠ করে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, অন্য কোনো দোয়া করলে তাও কবুল হয়, নামাজ পড়লে আল্লাহ ওই নামাজও কবুল করেন।
হজরত ওবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, রাতে যখন কারো ঘুম ভেঙে যায় এবং সে এ দোয়াটি পাঠ করে,
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদির, আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহা নাল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্যুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোন শরিক নেই, রাজত্ব তারই, আর সমস্ত প্রশংসা তারই, তিনি সব কিছুর ওপর শক্তিমান। পবিত্র-মহান আল্লাহ, গুনাহ থেকে বাঁচার এবং নেক কাজ করার কোনো শক্তি নেই আল্লাহর তাওফিক ছাড়া।
এ দোয়া পাঠ করে সে যদি বলে, হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন! তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বর্ণনাকারী ওলিদ বলেন, অথবা তিনি বলেছেন,) কোনো দোয়া করলে তা কবুল করা হয়। এরপর সে যদি যদি উঠে অজু করে নামাজ আদায় করে, তবে তার নামাজও কবুল হয়। (সুনানে আবু দাউদ)
তাই রাতে কখনও ঘুম ভেঙে গেলে এ দোয়াটি অবশ্যই পাঠ করুন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, দোয়া করুন। সম্ভব হলে উঠে চার রাকাত নামাজ আদায় করুন।
রাতে নামাজ আদায় অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে ও ও বহু হাদিসে এ আমলের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। কোরআনে মুমিনদের উত্তম বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ هَوۡنًا وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الۡجٰهِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا – وَ الَّذِیۡنَ یَبِیۡتُوۡنَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدًا وَّ قِیَامًا
আর রাহমানের বান্দা তারাই, যারা জমিনে বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন জাহেল ব্যক্তিরা তাদের (অশালীন ভাষায়) সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, সালাম; আর তারা রাত অতিবাহিত করে তাদের রবের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে এবং দাঁড়িয়ে থেকে। (সুরা ফুরকান ৬৩-৬৪)
নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার তাঝে কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। (সহিহ বুখারি)
আরেকটি হাদিসে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ সেই পুরুষের ওপর রহম করুন যে রাতে উঠে নামাজ পড়ে এবং তার স্ত্রীকেও জাগায়, তারপর সেও নামাজ পড়ে। স্ত্রী না উঠতে চাইলে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ ওই নারীর ওপর রহম করুন, যে রাতে উঠে নামাজ পড়ে এবং তার স্বামীকেও জাগায়, আর সেও নামাজ পড়ে। স্বামী না উঠতে চাইলে সে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমদ)
অর্থাৎ রাতের নামাজের জন্য নিজে ওঠা উচিত। পরিবার-পরিজনদেরও ওঠানো, নামাজ পড়তে উৎসাহিত করা উচিত।