শিশু ইয়াসীনকে নির্মমভাবে হত্যা এবং হত্যা শেষে গুম করার চেষ্টার জন্যে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের ফাঁসি চাই

নাবিন আহমেদ:

 

আমার বাবা এবং মায়ের দিকের পরিবারের কেউই কখনো মাদ্রাসায় পড়েনি। তাই সবার ইচ্ছেতেই পবিত্র আল কুরআনের হাফেজ হওয়া এবং ইলমে দ্বীন পরিপূর্ণভাবে অর্জনের জন্যে ইয়াসীনকে মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়।সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল।ইয়াসীনের স্বপ্ন ছিল দ্বীনি শিক্ষা লাভে সে দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যাবে।

ইয়াসীন বরিশাল জেলার বানারিপাড়া উপজেলার আউয়ার দারুল উলুম মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র। ইয়াসীন ২৮ পাড়ার হাফেজ। গত জুলাই মাসে ইয়াসীন এই মাদ্রাসায় ভর্তি হয়।এর আগে অন্য একটি মাদ্রাসা থেকে ২৪ পাড়া হেফজ করে।

ঘটনার দিন ১৭ অক্টোবর ওর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আব্দুর রব ওর মাকে বিকেল পাঁচটার পরে ফোন দিয়ে জানায় ইয়াসীনকে পাওয়া যাচ্ছে না, ইয়াসীন তার নানাবাড়ি গিয়েছে।ওর মা আমাদের বাড়িতে ফোন দিলে জানতে পায় ইয়াসীন নানাবাড়িতে যায়নি।এরপর হুজুরকে ফোন দিলে বলে ইয়াসীন ঢাকা গিয়েছে। ( ইয়াসীনের বাসা ঢাকায়)।আব্দুর রব সন্ধ্যার আগে আগে ফোন দেয়ায় ঘটনাস্থলে ওই রাতে পৌছানো সম্ভব হয় না।আমরা অস্থির হয়ে সকল আত্মীয়স্বজনের বাসায় কল দিয়ে জানতে পাই ইয়াসীন কারো বাসায় যায়নি।উল্লেখ্য ও অত্যন্ত নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির বাচ্চা। ও কখনোই কাউকে না বলে দূরে কোথাও যেত না।

পরদিন ১৮ অক্টোবর আমার বোন আমরা ঘটনাস্থলে পৌছানোর আগে আব্দুর রব হুজুরকে ফোন দিয়ে মাদ্রাসার আশেপাশে বারবার ভালোভাবে খুঁজতে বলে এবং মাইকিং করতে বলে যে ইয়াসীনকে পাওয়া যাচ্ছে না।আমিও আব্দুর রবের সাথে কথা বলি।সে বারবার বলে ইয়াসীন ঢাকা গিয়েছে,আমরা যেন ঢাকায় খুঁজি।

না পাওয়া গেলে ইয়াসীনকে অন্য হুজুর দিয়ে চালান দিয়ে খুঁজে এনে দেবে।আমি তার ভুজুংভাজুং শুনে রেগে যাই যে ইয়াসীনের খেয়াল সে ঠিকঠাক রাখেনি কেন। আব্দুর রব বারবার মিস গাইড করতেছিল যাতে আমরা ইয়াসীনকে মাদ্রাসার আশেপাশে না খুঁজি যাতে ওর লাশ না পাওয়া যায়।

এরপরেই ইয়াসীনের কাজিনরা ঘটনাস্থলে পৌছে জানতে পারে একটি লাশ ভেসে উঠেছে নদীতে এবং লাশ দেখে সনাক্ত করে ওটা ইয়াসীনের লাশ।

স্থানীয় চৌকিদারের ফোনে বানারীপাড়া থানার ওসি,এসআই গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে ময়নাতদন্তে পাঠায়। আমাদের পুরো পরিবার ইয়াসীনের আকস্মিক মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে যায়,শোকে মূহ্যমান হয়ে যায়। ইয়াসীনের দাফনের পর আমরা স্পটে গিয়ে জানতে পারি ইয়াসীনকে পাওয়া যাচ্ছেনা,এটা মাদ্রাসার আশেপাশের কেউ জানতো না লাশ না পাওয়া পর্যন্ত।

মাদ্রাসার ছাত্রদের ভাষ্যমতে ঘটনার দিন আহম্মদ হুজুরের নের্তৃত্বে মাদ্রাসার ছাত্ররা মাটি আনে উঠোনে। ইয়াসীন অত্যন্ত সৌখিন পরিবেশে বেড়ে উঠেছে,ও কখনোই এইসব শ্রমমূলক কাজ করেনি। তাই ক্লান্ত হয়ে পাকা ঘরের মেঝেতে বসে পড়লে মাদ্রাসার হুজুর রায়হান পাষন্ড তাকে এলোপাথাড়ি পিটাতে থাকে এবং এক পর্যায়ে ওর বুকে,চোখেমুখে সজোরে বারবার লাথি মারলে ইয়াসীন দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় এবং সেখানে অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর ইয়াসীনকে কাঁথা দিয়ে পেঁচিয়ে আব্দুর রব হুজুর,রায়হান হুজুর, আহম্মদ হুজুর সহ আরো অনেকে গুদাম ঘরে রাখে এবং রাতে ইয়াসীনের লাশ গুম করার উদ্দেশ্য নদীতে ফেলে দেয়। ইয়াসীনের লাশের ছবি মোবাইলে দেখে ওই ছাত্র পুরো ঘটনা এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেয়।

পরিবারের সবার চোখের মনি,অতি আদরের ধন,কলিজার টুকরা,কুরআনের পাখি ইয়াসীনকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।এই হত্যার নেপথ্যের কারণ সুরাহা হোক এবং শিশু ইয়াসীনকে নির্মমভাবে হত্যা এবং হত্যা শেষে লাশ গুম করার চেষ্টার জন্যে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের ফাঁসি চাই।বরিশালের বানারীপাড়ার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নে খোঁজ নিলেই পুরো ঘটনা যে কেউ জানতে পারবেন।এলাকাবাসীরা মানববন্ধন করেছে,তারা সবাই শিশু ইয়াসীন হত্যার বিচার চায় বলে জানান তার খালা আসমা জাহান খুশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *