যে মুমিনরা জান্নাতুল ফেরদৌসের অধিকারী হবে

স্বাধীন ইসলাম ও জীবন ডেস্ক  :

 

ফেরদৌস শব্দের মূল অর্থ বাগান। ফেরদৌস জান্নাতের একটি স্তর ও জান্নাতের প্রতিশব্দ। ফেরদৌস বলে কিছু হাদিসে জান্নাতের বিশেষ স্তর বোঝানো হয়েছে। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতে একশত মর্যাদা প্রস্তুত করে রেখেছেন। প্রতি দুই শ্রেণীর মর্যাদার মাঝে দূরত্বের পরিমাণ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। আপনারা যখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেন, তখন ফেরদৌস প্রার্থনা করবেন। এটি জান্নাতসমূহের মধ্যমনি ও সর্বোত্তম জান্নাত। তার উপরেই আল্লাহর আরশ এবং সেখান থেকে জান্নাতের ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত হয়। (সহিহ বোখারি: ২৭৯০)

এ ছাড়া অনেক আয়াত ও হাদিসে ফেরদৌস বলে সব জান্নাতই বোঝানো হয়েছে। যেমন সুরা কাহাফে আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের মেহমানদারির জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদৌস। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। সেখান থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও যেতে চাইবে না। (সুরা কাহাফ: ১০৭-১০৮)

মুফাসসিরদের মতে এ আয়াতে ফেরদৌস বলে বিশেষ কোনো জান্নাত নয় বরং সব জান্নাতই বোঝানো হয়েছে।

সুরা মুমিনুনের শুরুতে আল্লাহ তাআলা তার জান্নাতি বান্দাদের কিছু গুণাবলি উল্লেখ করেছেন এবং ঘোষণা করেছেন এই গুণসমূহ যাদের মধ্যে আছে, তারাই হলো ফেরদৌসের অধিকারী এবং তারা ফেরদৌসে চিরকাল থাকবে। এখানেও ফেরদৌস বলে সব জান্নাত বোঝানো হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে, যারা নিজদের নামাজে বিনয়াবনত। যারা অনর্থক কথা ও কাজ এড়িয়ে চলে। যারা জাকাত দানে সক্রিয়। যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে নিজেদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসী ব্যতীত, এ ক্ষেত্রে তারা নিন্দা থেকে মুক্ত। এদের অতিরিক্ত যারা কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। আর যারা নিজেদের আমানাত ও ওয়াদা পূর্ণ করে। যারা নিজেদের নামাজের ব্যাপারে যত্নবান। তারাই হবে অধিকারী। অধিকারী হবে ফিরদাউসের, যাতে তারা বসবাস করবে চিরকাল। (সুরা মুমিনুন: ১-১১)

এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের যে পাঁচটি গুণের কথা বলেছেন,

ক. তারা নিয়মিত উত্তমরূপে মনোযোগের সাথে নামাজ আদায় করে।

খ. তারা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে। অনর্থক কথা বলে না, অনর্থক কাজেও জড়িত হয় না।

গ. তারা প্রতি বছর তার সম্পদের জাকাত আদায় করে।

ঘ. তারা নিজেদের চরিত্র হেফাজত করে, কোনো রকম অবৈধ সম্পর্কে জড়িত হয় না।

ঙ. তারা নিজেদের ওয়াদা পূর্ণ করে ও আমানতের হেফাজত করে।

এই গুণগুলো যাদের মধ্যে থাকে, অবশ্যই তারাই সফল যেমন আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা বলেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রকৃত সফলকাম ওই ব্যক্তি, যে নিজের কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে, আখেরাতে আল্লাহর ক্ষমা এবং চির শান্তির নিবাস ফেরদৌসের অধিকারী হওয়ার উপযুক্ত হয়।

মুমিন ব্যক্তি দুনিয়াতেও সফলতা, সম্পদ ও সুখ-শান্তি লাভ করতে পারে। তবে দুনিয়ার সুখ-শান্তি সত্যিকার সফলতা নয়। সত্যিকার সফলতা আখেরাতের সফলতা; যদিও দুনিয়ার মানুষের চোখে দুনিয়ার সফলতা, সুখ ও সম্পদকেই আসল সফলতা মনে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *