রিদওয়ানুল করিম :
গত ৫ আগস্ট তীব্র গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর নড়বড়ে হয়ে যায় সারাদেশের মতো কক্সবাজারের ৯টি থানার পুলিশি ব্যবস্থা। সেদিন বেশিরভাগ থানায় হামলা, ভাঙচুর করা হয়। আগুনের শিকার হয় কক্সবাজারের দুইটি থানা। এর জের ধরে জেলার ৯ উপজেলার সব থানা, পুলিশ ফাঁড়ি এবং তদন্ত কেন্দ্র ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। ফলে জেলা জুড়ে তৈরি হয় পুলিশ শূন্যতা। বিশেষ করে কক্সবাজার সদর থানায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
একইসাথে ট্রাফিক পুলিশবিহনী হয়ে পড়ে কক্সবাজার রাস্তাঘাট। এরপর থেকে অনেকেটা দূর্বল হয়ে পড়ে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। যার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বুক ফুলিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় সন্ত্রাসীরা। ফলে দিনদিন অনিরাপদ হয়ে উঠে পুরো কক্সবাজার। পর্যটন নগরী হওয়ায় এখানে প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের আনাগোনা, তারাও ছিলো অনিরাপদ। তবে দীর্ঘদিন নানা কারণে মাঠপর্যায়ে সক্রিয় হতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় সক্রিয় হয়ে উঠে অপরাধীরা। ঘটেছে চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, দখল, পাল্টা দখল, ছিনতাই, খুনসহ বহুমাত্রিক অপরাধ। তবে ধীরে ধীরে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুলিশ।
পুরোদমে নাগরিকদের আইনি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। এর ফলে কমতে শুরু করেছে অপরাধও। এতে জনমনে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে।
সরকার ক্ষমতার পালাবদলে ভেঙেপড়া পুলিশি কার্যক্রম ফের পরিপূর্ণ সচল হয়েছে। প্রতিটি থানায় চলছে কার্যক্রম। ফলে সাধারণ মানুষ পাচ্ছে আইনি সেবা।
আইনি সেবা নিতে আসা নাগরিকেরা বলছেন,থানায় আগে আর্থিক ঘুষ লেনদেন হতো সেটিও অনেকটা কমে এসেছে।
এদিকে পুলিশ সক্রিয় হওয়ায় স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষসহ ব্যবসায়ীদের মাঝে। কক্সবাজার পর্যটন ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলাম জানান,পুলিশের তৎপরতা বেড়েছে। ৫ আগষ্টের পর পুলিশের কার্যক্রম না থাকায় অপরাধীদের আস্তানায় পরিনত হয়েছে পর্যটন জোন, হোটেল মোটেল এলাকা ও গ্রাম-শহর। সেখানে যে যেমন পারছে চাঁদাবাজি, হুমকি ও টাকা আদায় করছে৷ সাধারণ মানুষ অসহায়ত্বে পড়ে গিয়েছেলো। কিন্তু পুলিশ এখন পুরোদমে মাঠে ফেরায় অনেকটা শান্তিতে আছি। সৈকতের ঝিনুক ছাতা মার্কেটে ব্যবসায়ি কলিম উল্লাহ বলেন,পুলিশের তৎপরতা না থাকাই চাঁদাবাজ চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। প্রতিদিন আমাদের নানা হুমকি ধামকি দিতো চাঁদাবাজ চক্র । পুলিশের তৎপরতা বাড়ানোর ফলে চক্রটি এখন গা ডাকা দিয়েছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সেবা নিতে আসা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তানভীর বলেন,আমাদের যখন প্রয়োজন হয় সাথে সাথে পুলিশের সহযোগীতা পাচ্ছি। এছাড়া তাৎক্ষণিক পুলিশের প্রয়োজন হলে ৯৯৯ নাম্বারে কল দিলে সাথে সাথে পুলিশ এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। সেলিম উদ্দিন বলেন,আমরা এমন পুলিশ পেয়েছিলাম। যারা জনগণের কথা ভাববে, সাধারণ মানুষের বিপদে এগিয়ে আসবে। আগে সব থানায় ঘোষ লেনদেন হতো এখন তেমন কিছু লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। খুরশেদ আলী বলেন,কক্সবাজারে গত কয়েক মাসের চেয়ে অনেকটা অপরাধ কমে এসেছে। তবে গভীর রাতে আরো পুলিশের আরো তৎপরতা বাড়ানো দরকার। বেশ কিছু জায়গায় এখনও প্রতিদিন ছিনতাই এর ঘটনা ঘটছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আজিম নোমান বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। আমাদের প্রতি জনগণ ভরসা রাখতে পারবে। কক্সবাজার শহর কিংবা সদর থানার আওতাধীন সকল এলাকায় অপরাধমুক্ত রাখতে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। এছাড়া পর্যটন এলাকায় ছিনতাইকারীদের দাপট কমাতে আমাদের টহল জোরদার রয়েছে। সেটিও অনেকটা কমে এসেছে।