এটিএম মাজহারুল ইসলাম, ব্যুরো চীফ (কুমিল্লা);
সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে এবং কোন প্রকার অনুমোদন না নিয়ে শুধুমাত্র রেজিষ্ট্রেশনের জন্য অনলাইনে আবেদন করেই প্রায় ৩ বছর পূর্ব থেকেই চিকিৎসার নামে অর্থ বাণিজ্য করে আসছে কুমিল্লা চান্দিনা মোকাম বাড়ী মসজিদ সংলগ্ন আলী আক্কাস চেয়ারম্যান প্লাজায় অবস্থিত স্কয়ার স্পেশালাইজড হসপিটাল।
সরেজমিনে গিয়ে স্কয়ার স্পেশালাইজড হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ মো: এস.ইউ সৌরভ সাথে কথা বললে তিনি শুধুমাত্র রেজিষ্ট্রেশনের জন্য অনলাইনে আবেদনের কপি ও ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স দেখিয়ে বলেন এগুলো দিয়েই দীর্ঘ তিন বছর পূর্বে স্কয়ার স্পেশালাইজড হসপিটালের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করি। কিন্তু হসপিটাল আইন অনুযায়ী লাইসেন্স ব্যাতীত অস্রপচার ও হাসপাতাল কার্যক্রম চালানো আইনয়ত দন্ডনীয় অপরাধ। আইনের বিধিবিধান তোয়াক্কা না করে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পশ্চিম পার্শ্বে গড়ে উঠেছে স্কয়ার স্পেশালাইজড হসপিটাল। ঐ হসপিটালে অহরহ চলছে সিজারিয়ান সহ মারাত্মক ধরনের অস্রপাচার। পরিবেশ লাইসেন্স, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স, আণবিক শক্তি কমিশন লাইসেন্স (এক্সে সনদ), নারকোটিকস লাইসেন্স, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এনওসি সনদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আর কোন সনদের কপি দেখাতে সক্ষম হননি। ব্যবস্থাপনা পরিচালকর ডাঃ মো: এস.ইউ সৌরভের নিকট অনুমোদনহীন এই হাসপাতাল কিভাবে চালাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ও চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিকট থেকে মৌখিক অনুমোদন নিয়েই দীর্ঘ তিন বছর যাবত স্কয়ার স্পেশালাইজড হসপিটালে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্কয়ার স্পেশালাইজড হসপিটালের চেয়ারম্যান হচ্ছেন কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের পিতা ও দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ মো: এস.ইউ. সৌরভ হচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই দেবিদ্বার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো: মামুনুর রশিদের শ্যালক। হসপিটাল কর্তৃপক্ষ উদ্বোধন করার পর থেকেই আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়ে এবং সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে চালাচ্ছেন এই স্কয়ার স্পেশালাইজড হসপিটাল।
অনুমোদনহীন এই হসপিটাল কর্তৃপক্ষ লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করেই দীর্ঘ তিন বছর যাবত চিকিৎসা, সিজারিয়ান অপারেশন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। স্কয়ার স্পেশালাইজড হসপিটাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট আবেদন করেই লাইসেন্স পেয়ে যাবার ভাব নিয়ে মানুষ ঠকানো ব্যবসার ফাঁদ পেতে বসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই অদক্ষ অপারেটর দিয়ে এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন চালাচ্ছে। চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়তই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা সহজ-সরল রোগী ও তার পরিবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ভুয়া ডাক্তার ও দালাল চক্রের খপ্পড়ে পড়ে অনেকে নিঃস্ব হচ্ছেন। অনুমোদনহীন স্কয়ার স্পেশালাইজড হসপিটালে শুধু অর্থই নয়, চলে রোগীদের জীবন নিয়ে খেলাও। আবার চিকিৎসার নামে রোগী ও স্বজনদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ঘটনাও প্রতিনিয়ত ঘটছে।
বর্তমানে একটি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র পরিচালনার জন্য পরিবেশ লাইসেন্স, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স, আণবিক শক্তি কমিশন লাইসেন্স, আয়কর সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, নারকোটিকস লাইসেন্স, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এনওসি সহ মোট ২১টি শর্ত পূরণের মাধ্যমে একটি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স মিলে। নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে এসব লাইসেন্স যেমন পেতে হয়, তেমনি নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলে লাইসেন্সগুলো নবায়নও করতে হয়। তাই অনেকেই এসব শর্ত পূরণ করে লাইসেন্স না পেলেও ব্যবসা শুরু করে দেয়। তবে অভিযোগ রয়েছে নানা শর্তে লাইসেন্স দেওয়া হলেও সরকারি তদারকির অভাব রয়েছে। ফলে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে দক্ষ প্যাথলজিস্ট, চিকিৎসক ও ডিপ্লোমা নার্স থাকা বাধ্যতামূলক হলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে এসব শর্ত পালন হচ্ছে না।
চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আরিফুর রহমান বলেন, অনেক সময় অনুমোদনের আবেদন করার পর অনুমোদনের অপেক্ষায় না থেকেই এসব প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করে প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ। আমরা বিভিন্ন সময় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও অনেক ক্ষেত্রে ঐসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেই। রেজিষ্ট্রেশন পাওয়ার আগে প্রতিষ্ঠান চালানো বিধি সম্মত নয়। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান চালানো হবে।
অনুমোদনহীন হাসপাতালের ব্যাপারে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা: নাছিমা আক্তার বলেন, অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিকের বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও কাগজপত্র ঠিক না থাকলে ঐসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে।