শত বছরের ঐতিহ্য ভলাকুট চন্ডীতলার কার্তিক মেলা

স ম জিয়াউর রহমান :

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রত্যন্ত এলাকা নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট । এ গ্রামে প্রতি বছর ঐতিহ্যবাহী ‘চন্ডী তলার’ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এ মেলাকে ঘিরে এলাকায় নানা স্মৃতি রয়েছে। শত বছরের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মেলাটির আয়োজন করে স্থানীয়রা। এটিই উপজেলার সর্ববৃহৎ মেলা।চলে এক মাসেরও বেশী সময় ধরে। এ মেলাকে ঘিরে এলাকায় চলে উৎসবের আমেজ।
লোকমুখে জানা যায়, নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট বাজারের নদীর পাড় সংলগ্ন অশ্বত্থ গাছের (বটতলা) নিচে প্রতিবছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে কার্তিক পুজা উপলক্ষে প্রায় দুই শত বছর ধরে এ মেলা যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে।এখানে চন্ডী পূঁজা হয়, একারনেই এটিকে চন্ডিতলা বলা হয়ে থাকে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন চন্ডী তলায় একটি মণ্ডপকে ঘিরে এ মেলার আয়োজন করতেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এখন হিন্দু, মুসলিম ধর্মবর্ণের সবাই মিলে এ মেলার আয়োজন করে থাকেন।
তিন দিনব্যাপী মেলার প্রচলন হয়ে থাকলেও প্রায় মাসব্যাপী চলে মেলার বেচা-কেনা। মেলায় শাড়ি-লুঙ্গি, বাঁশ ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন ফার্নিচার, কসমেটিক, বাচ্চাদের খেলনা, মিষ্টান্ন, মুড়ি – মুড়কি বিক্রি হয়ে থাকে। নাসিরনগর উপজেলা সহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজারো লোকের সমাগম হয় এ মেলায়। মেলাকে ঘিরে এলাকায় সাজসাজ রব ওঠে। আত্মীয়-স্বজনের আগমন ঘঠে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। বিভিন্ন ধরনের মিঠাই মিষ্টান্ন পিঠা খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
তবে সব কিছু ছাপিয়ে এ মেলায় প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে কাঠের তৈরি বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচার । ভলাকুটের কার্তিক মেলাকে তাই “কাঠের মেলা বা কাঠ বান্নি ” বলেও সম্বোধন করা হয়। প্রতিদিন ওই মেলায় হাজির হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানের নানান বয়সের ও বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার নারী পুরুষ দর্শনার্থী ।মেলায় দর্শনার্থীদের আগমনে এ মেলা যেন বাঙালীর চিরচেনা মিলনমেলায় পরিণত হয়।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) মেলায় ঘুরতে গিয়ে নরসিংদীর বেলাব উপজেলা থেকে আসা ফার্নিচার ব্যবসায়ী কামাল হোসেন খানের সাথে প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি জানান প্রায় ১০/১২ বছর ধরে নৌকা করে এ মেলায় তিনি নিয়মিত কাঠের ফার্নিচার নিয়ে আসেন। এ মেলা থেকে মধ্যবিত্তরা সীমিত মূল্যে আসবাব পত্র ক্রয় করতে পারেন।মেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি তার সন্তুষ্টির কথা জানান।
চাতলপাড়ের ফার্নিচার ব্যবসায়ি দীপক সূত্রধর জানান আরো এক সপ্তাহ মেলায় থাকবো।এবার বেচা কেনা খুবই ভালো। মেলায় কোন ধরনের ঝামেলা নাই।খুব সুন্দরভাবে মেলা চলছে।
মেলা উদযাপন কমিটির পক্ষে ভলাকুট বাজার কমিটির সাবেক সাধারন সম্পাদক হারুন তালুকদার বলেন, ঐতিহ্য রক্ষায় আমরা প্রতি বছর এই মেলার আয়োজন করে থাকি। মেলার সময় মনে হয় এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মেলায় শান্তি শৃঙ্খলার জন্য প্রশাসনের তদারকি রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *