মোঃছোবাহানমিয়া শিবচর উপজেলা মাদারীপুর প্রতিনিধি;
শীতের শুরুতেই শীতকালীন ফসল নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মাদারীপুরের কৃষকেরা। রবি শস্যের পাশাপাশি শীতকালীন সব্জি উৎপাদনে মাঠে মাঠে ব্যস্ততা চাষীদের। পুরো শীতকালীন সময়ে ধারাবাহিক ভাবে নানা রকম সব্জি চাষ করছেন কৃষক। মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে ফুল কফি, বাঁধা কফি, মুলা, লাল শাক, পালন শাক, টমেটো, গাজর, করলাসহ বিভিন্ন শাকসব্জি চাষাবাদ করা হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে এসকল শাকসব্জি বিক্রি হচ্ছে নিয়মিত।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই কৃষকেরা মাঠে ফসলের যত্ন নিতে বস্ত। কেউ আগাছা পরিস্কার করছেন, কেউ শাক-সব্জি তুলছেন ক্ষেত থেকে। আবার কেউ ফসল বোনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারো জমিতে মাটি কর্ষন হচ্ছে। জেলার সদর উপজেলার ধুরাইল এলাকার সরদারকান্দি এলাকায় দেখা গেছে, মুলাক্ষেতে আগাছা পরিস্কার করছেন কৃষক। একই জমিতে টমেটো চাষ করেছেন আব্দুর রব নামের এক ব্যক্তি। মুলা বাজারে বিক্রির উপযোগী হতেই টমেটো ধরতে শুরু করবে। একই সাথে তিনি মরিচ, ফুলকফি, পালন শাকের চাষও করেছেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন,’গত ৩ বছর ধরে জমি লিজ নিয়ে শুধুমাত্র সব্জির চাষ করছি। সারা বছরই আমার জমি থেকে মৌসুম উপযোগী সব্জি চাষ হয়। এসকল সব্জি স্থানীয় বাজারেই বিক্রি করে থাকি।’
তিনি আরও বলেন, চলতি বছর মুলা ও টমেটো চাষ করেছি ৩ কাঠা জমিতে, ফুলকফি এবং পালন শাক চাষ করেছি ৫ কাঠা জমিতে।’
আরেক কৃষক সোহরাব শেখ বলেন,’আমি জমিতে লাল শাক, ধনিয়াপাতার চাষ করি। এবছর বৃষ্টির কারণে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও যা আছে, তা বিভিন্ন সময় তুলে বাজারে বিক্রি করছি। আমি প্রতি বছরই শাক-সব্জির চাষবাস করি। এ বছর ১৪ কাঠা জমিতে শাক-সব্জির চাষ করেছি।’
এদিকে শিবচর উপজেলার সন্যাসীর চর এলাকার মো.সুমন আহমেদ নামে এক কৃষক বলেন,’চলতি বছর অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তারপরও শীতকালীন সব্জি রয়েছে ক্ষেতে। মুলা, টমেটো, বেগুন, ফুলকফি, বাঁধাকফি, শিমের চাষ করেছি।’
উপজেলার দত্তপাড়া এলাকার মো.ফারুক বলেন,’জমিতে এবার সরিষার চাষ করা হয়েছে। মাঘী সরিষা নামের একটা জাত রয়েছে। গাছ খুব ছোট হয়। এগুলো আগাম চাষ করা হয়। জমিতে দুইজাতের সরিষার চাষাবাদ করেছি এবার। আশা করি ভালো ফলন আসবে।’
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৭শত হেক্টর জমিতে গম, ৫শত হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ৪ হাজার ৩শত হেক্টর জমিতেদুই জাতের সরিষা, ২৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী, ৭শত ৫০ হেক্টরে চিনাবাদাম, ১৫শত ৭০ হেক্টরে মসুর, ১১শত হেক্টরে খেসারী, ৩৬শত হেক্টরে পেঁয়াজ, ২৭ শত হেক্টরে রসুন চাষ করা হয়েছে। এছাড়াও কালোজিরা চাষ করা হয়েছে ১৫ শত হেক্টর জমিতে, ধনিয়া ১৩ শত হেক্টর এবং ১ হাজার হেক্টর জমিতে নানা রকম শাকসব্জি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান,’আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উপজেলার বিস্তৃর্ণ জমিতে রবিশস্যের মধ্যে সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, কালোজিরা চাষ হচ্ছে। এছাড়া অনেকেই শাক-সব্জি চাষ করছেন নিয়মিত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জিত হবে বলে আশা রাখি।’