শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।

mih_pial;

শনিবার ১৪ ডিসেম্বর,
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। বিপ্লবী আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু ও সংগ্রামী সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের নেতৃত্বে এই শ্রদ্ধা নিবেদন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং এর অধীনস্থ থানা ও ওয়ার্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দিবসটি উপলক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে দলটি তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

এই দিনটি বাংলাদেশে প্রতিবছর রাষ্ট্রীয়ভাবে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসাবে পালিত হয়। এ দিনটি গভীর বেদনার, শোকের অশ্রু ঝরানো এবং স্বজন হারানোর কষ্টে কাতর। আজকের এই দিনে সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠ থেকে যখন শুনি-সব ক’টা জানালা খুলে দাও না/ওরা আসবে চুপি চুপি/যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ-হৃদয়টা শিক্ত হয়ে ওঠে, অশ্রুধারা রোধ করা যায় না, হারানো স্বজনদের কিছুতেই মন থেকে মুছে ফেলা যায় না। এমন দিনেই তো বলা যায়-বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা, এর যত মূল্য সে কি ধরার ধুলায় হবে হারা। না, তাদের রক্তস্রোত শুকিয়ে যায়নি, মায়ের অশ্রুধারা ধরার ধুলায় হারিয়ে যায়নি। আজও সে রক্ত, সে অশ্রুধারা ফিনকি দিয়ে উৎক্ষিপ্ত হয়ে চলেছে। এর কোনো বিরতি নেই, বিরাম নেই।

একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানি বাহিনী যে গণহত্যার সূচনা করে, তার ওপর বিরামচিহ্ন অঙ্কিত হয় সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর। সেদিন পাকিস্তানি সেনারা সব মানসম্মান হারিয়ে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। সেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কী কারণে জানি না মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানি উপস্থিত হতে পারেননি। এর ফলে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের জৌলুস কিছুটা হলেও ম্লান হয়ে গিয়েছিল।

’৭১-এর ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর অবধি এমন কোনো দিন নেই, রাত নেই, পল নেই, দণ্ড নেই-যে মুহূর্তে আমরা একজন স্বজনকে হারাইনি। এই স্বজন রক্তের সম্পর্কে স্বজন না হলেও জাতীয়তার পরিচয়ে পিতামাতা বা ভ্রাতা-ভগিনী হিসাবে অতি আপনজন। মুক্তিযুদ্ধের আগে আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম-দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত, প্রয়োজন হলে দেব এক নদী রক্ত। রক্ত তো আমরা দিয়ে যাচ্ছি। রক্ত দিয়েছি অশোকের আমলে, রক্ত দিয়েছি সেনদের আমলে, রক্ত দিয়েছি মোগলদের আমলে, রক্ত দিয়েছি সিপাহি যুদ্ধে, জালিয়ানওয়ালা বাগে, সৈয়দ আহমদ বেরলভির জেহাদে, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লায়, প্রীতিলতার আত্মাহুতির রক্তদানে, ব্রিটিশ শাসনের ঔপনিবেশিকতায়। এদেশের মানুষ হাসিমুখে ফাঁসির দড়িতে প্রাণ দিয়ে গেছে। রক্ত আমরা আরও দিয়েছি ভাষার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, শিক্ষার জন্য, এক সূর্যের নিচে মানুষ মানুষের ভাই এমন অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা অকাতরে এভাবে রক্ত দিয়েছি পাকিস্তানের ভিন্ন এক ধরনের ঔপনিবেশিকতায়। তাতেও পাকিস্তানিদের খায়েশ মেটেনি। বর্গির হামলাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওরা হামলা চালায় ’৭১-এ। ’৭১-এর সেই দিনগুলোয় পাকিস্তানি সেনাদের নিষ্ঠুরতায় আমরা যাদের হারিয়েছি, তাদের হারানোকে বলি গণহত্যা। গণহত্যায় যারা শহিদ হয়েছিলেন, তারা ছিলেন আমজনতা।

দেশের জন্য জীবন দেওয়া আমজনতা ও বুদ্ধিজীবীর মধ্যে ভেদরেখা আনা যুক্তিযুক্ত নয়। দেশের জন্য যারা প্রাণ দেন, তারা সবাই মহান শহিদ, মহান দেশপ্রেমিক। তাই তো কবি গেয়েছেন, ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে/কত প্রাণ হলো বলিদান/লেখা আছে অশ্রুজলে।’ যাদের নাম লেখা আছে অশ্রুতে, তাদের মধ্যে আমরা কীভাবে বিভাজন করি? আমজনতাই হোক আর বুদ্ধিজীবীই হোক, সবারই নাম লেখা আছে অশ্রুতে। আমরা কাউকে কোনোমতে ভুলতে পারি না। তারা সবাই আমাদের চলার পথে প্রেরণাদায়ী মহামানব। তবুও নিয়ম করা হয়েছে পৃথকভাবে ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের। এ দিবস বিশেষভাবে পালনের কারণও আছে। সেই পাকিস্তানি সময় থেকে বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছিল। বলা হতো তারা পাকিস্তানের দুশমন। শিশুরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অসময়ে পঙ্গু করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা তাদের লেখনী দিয়ে জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ায়। তারা বাঙালিদের বলে, পাঞ্জাবিরা তাদের শত্রু। তারা বলে, বাঙালিরা পাঞ্জাবিদের ঘৃণার চোখে দেখে। এসব শিক্ষিত উচ্চ ডিগ্রিপ্রাপ্ত ব্যক্তি দেশের জন্য ঘোর বিপদ ডেকে আনবে। তাই তাদের চোখে চোখে রাখা হতো। তাদের সব ধরনের কাজে নজর রাখা হতো।

এ সময় আরও ছিলেন– বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান,অধ্যাপক ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়াপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আবদুশ সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শামীমুর রহমান শামীম, মাহবুবুল ইসলাম মাহবুব, মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, সদস্য সচিব মোস্তাফা জামান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহীদুল ইসলাম বাবুল, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম, নাছির উদ্দিন নাছিরসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *