তারুণ্যের শক্তি দিয়েই গড়তে হবে স্বপ্নের বাংলাদেশ: জেলা প্রশাসক

এটিএম মাজহারুল ইসলাম, ব্যুরো চীফ (কুমিল্লা)

 

‘তারুণ্যের শক্তি দিয়ে গড়তে হবে স্বপ্নের বাংলাদেশ’ বলে মন্তব্য করেছেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো: আমিরুল কায়ছার। তিনি বলেন, তরুণদের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্ম পাবে সুন্দর বাংলাদেশ। আমার বিশ্বাস, তাদের হাত দিয়ে আমরা প্রত্যাশিত বাংলাদেশ পাব। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারী) সকালে চান্দিনা উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

জেলা প্রশাসক বলেন- তরুণদের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর দেশ, মাটি, পানি, বাতাস আমরা রেখে যেতে চাই। তরুণরা যা পারে, বয়স্করা তা পারে না। এটা আমরা দেখেছি, প্রমাণও হয়েছে। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে তাদের চোখে কেমন দেশ দেখতে চাই। বিভিন্ন কর্মশালা থেকে তাদের ভাবনা গুলো আমরা নিচ্ছি এবং তাদের বুঝাতে হবে একটা রাষ্ট্র কিভাবে চলে। একটা দেশ কিভাবে পরিচালিত হয়। আবেগের পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তারুণ্যের শক্তি দিয়ে পরিবেশ উন্নয়ন ও স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হবে।

তিনি বলেন- আবার ইট, কাঠ, পাথর, বিল্ডিং তৈরি উন্নয়ন মানেই শুধু উন্নয়ন না। আমরা উন্নত মানে এই না যে, আমাদের আগের প্রজন্মে যারা চটের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতো, আমরা এখন স্মার্ট হয়ে গেছি যে, পলিথিন ব্যাগে বাজার করবো। এইটাকে উন্নয়ন বলে না, আমাদেরকে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে, পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে হবে। আমার মাটি, পানি, বাতাস যদি দূষিত হয়, আমরা বেশি দিন বাঁচতে পারবো না। বর্তমানে পলিথিন এতো ব্যপক হয়েছে যে আমাদের এখন মৃত্যুর কারণ হয়ে যাচ্ছে। আমরা অনেকেই রাতের বেলা ফসলী জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছি। যারা সাময়িক লাভের জান্য কিছু টাকা পেয়ে হয়তো মাটি বিক্রয় করছেন। এইটার ফলে যে রাষ্ট্রের ও সমাজের কি ক্ষতি করছি তা আমরা নিজেরাই জানি না। এই মাটিতে যে ফসল হতো পরের বছরে এই ফসলটা হবে না। কারণ ফসল হওয়ার জন্য যে উপাদানগুলো দরকার সেগুলো মাটির উপরের স্তরে থাকে। যখন এটা কেটে ফেলা হয় ওই জমিতে ফসল হয় না। ফসল না হলে আমার ফসলের ঘাটতি দেখা দিবে, আমি ক্ষতিগ্রস্ত হবো। বাজারে এই ফসল বা এর আয়ের অর্থ আসবে না। তাঁর মানে ১০ টাকার মাটি বিক্রি করে আমার ২০ টাকার ফসল ক্ষতি করলাম। এর ফলেই বোঝা যায় আমরা উন্নত না। আমাদের মানসিকতা উন্নত হয়নি।

তিনি আরো বলেন- আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছি যে, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে চায় না। শিক্ষকরা এমন কাজ কেনই বা করবেন? শিক্ষার্থীরাই বা আন্দোলন কেন করবেন? শিক্ষার্থীর কাজ শ্রেণী কক্ষে পাঠদান করা, শিক্ষকদের সম্মান করা। শিক্ষকদের কাজ হলো শ্রেণী কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক শিক্ষকমন্ডলী এর বাহিরে যেটা তার করার কথা না এমন কাজে নিজেকে জড়ান এটিও দুঃখজনক। সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলী যারা আপনারা এই ধরনের পরিস্থিতি ফেইস করছেন যে, শিক্ষার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে এইটিও মোটে কাম্য নয়। যেটা আমাদের করার কথা না অনেক ক্ষেত্রে সিমারেখা অতিক্রম করে নিজেদের কাজের বাহিরে গিয়ে আমরা সেই কাজটাই করছি। উভয় পক্ষের কার্যক্রম তার যার যে কাজ করার কথা সে সেই কাজটাই করবেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাস্তা অবরোধ করছে। এই রকম ঘটনা আমরা চান্দিনাসহ অনেক জেলায় ও উপজেলায় দেখেছি। আমার দাবি থাকতে পারে, অপ্রাপ্তী থাকতে পারে, সেটি রাস্তা অবরোধ করে আদায় করা মানে রাস্তায় চলাচলকারী সকল মানুষকে কষ্ট দেওয়া। রাস্তা অবরোধ করাটা একটা কোন সভ্যতার পরিচয় বহন করে না। কারণ অন্যজনকে কষ্ট দিয়ে কিছু আদায় করা, এইটা কোন সভ্যতার মধ্যে পরে না, কোনো কালচার হতে পারে না। তাঁর মানে আমরা উন্নত না, কারণ আইন মানছি না।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন- আজকে দেখা যাচ্ছে ভাই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ স্বার্থ নিয়ে জমি নিয়ে মারামারি খুনাখুনি, কোনো সভ্য মানুষ এগুলো করতে পারে না। আমরা এগুলো করে নিজেকে উন্নত বলে দাবি করতে পারি না। অনেক সময় দেখা যায় সড়ক বিভাজনে বেরিয়ার থাকা সত্বেও নিয়ম ভঙ্গ করে আমরা এইপার থেকে ওইপার দৌঁড়ে মহাসড়ক পারি দিচ্ছি। রাস্তা পার হতে একটা নির্ধারিত নিয়ম আছে, জেব্রাক্রসিং লাগে আমরা জানি বই পুস্তকে পড়েছি, কিন্তু বাংলাদেশের কোথাও জেব্রাক্রসিং নাই, বাস্তবে দেখিনি। রাস্তায় অকারণে গাড়ি হর্ণ দেয় , হর্ণ দেওয়ার অর্থ অসভ্যতার পরিচয় বহন করে। আমি আরও সামনে যাওয়ার জন্য কেন হর্ণ দিবো? কিন্তু সামনে যিনি আছেন তিনি যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে থাকলে দাঁড়িয়ে থাকতো না। হর্ণ দেওয়াটা বিশ্বব্যাপী সভ্যতার পরিচয় বহন করে না। উন্নয়নের যেই বিষয় গুলো এটা অনেক ব্যপক। পরিবেশ যদি নষ্ট করি, পরিবেশ আমাকে ভালো থাকতে দিবে না, পরিবেশ নষ্ট হলে আমি নিজেই ভালো থাকতে পারবো না। আমরা সবাই পরিবেশকে রক্ষার জন্য আমাদের জীবনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।

অনুষ্ঠানে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিয়া হোসেন এর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ইকবাল হাসান, উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তানজিলা খন্দকার। এসময় উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (গোপনীয়) আব্দুল্লাহ আল নূর আশেক, সহকারী কমিশনার ফাইয়াজ খান, সহকারী কমিশনার রাফিদ খান, সহকারী কমিশনার মালিহা সুলতানা, চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান, উপজেলা কৃষি অফিসার মোরশেদ আলম, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার শফিকুল ইসলাম, সমাজসেবা অফিসার নাছিমা আক্তার, চান্দিনা পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ ইউসুফ আলী, চান্দিনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার সরকার, কুটুম্বপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল কবির, বরকইট উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু তপন চন্দ্র দেবনাথ, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন কুমিল্লা জেলা কমিটির যুগ্ম-সদস্য সচিব মোহাম্মদ অনিকসহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীসহ প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *