দীর্ঘদিন ধরে কোন বৃষ্টিপাত নেই, জমি শুকিয়ে চৌচির

মোঃ ইসলাম উদ্দিন তালুকদার :

হাওরাঞ্চলের উপজেলা তাহিরপুরে সেচ সংকটে কারণে ইরি—বোর ফসলি জমি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে কোন বৃষ্টিপাত নেই। বৃষ্টিপাত না হলে বোর ফসল উৎপাদন কম হওয়ার আশংকা হাওরপাড়ের কৃষকদের। স্থানীয় কৃষকরা জানান, দেশি জাতের ধান চাষাবাদে সেচ তেমন প্রয়োজন নেই, কিন্তু হাইব্রিড জাতীয় ও উচ্চফলশীল ধান চাষাবাদে প্রচুর সেচ প্রয়োজন পড়ে। হাওরের বেশিরভাগ এলাকায় একদিকে যেমন সেচ সুবিধা নেই, অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া, হালির, আঙ্গারুলি, সমসা, বর্ধিত গুরমা, জিনারিয়া, পানা, বলদা, বনুয়া হাওর সহ উপজেলার ২৩ টি ছোটবড় হাওরে ১৮ হাজার হেক্টর জমির ইরি বোর ফসল নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা।

বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ হাওরগুলোতে সেচ দেয়ার সুবিধা নেই। বিভিন্ন হাওরের নদী তীরবর্তী স্থানে যে সমস্ত জমি রয়েছে। সে জমিতে যৎসামান্য পানি দেয়া যায়। অপরদিকে জমিতে সেচ মৌসুমের আগেই নদী নালা, খাল, বিল জলাশয় শুকিয়ে যায়।

ফলে বৃষ্টির অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় কৃষকদের। বর্তমানে হাওরে হাওরে কৃষকের রোপণকৃত জমিতে পানির অভাবে ধান গাছের পাতা লালচে রং ধারণ করছে। এ অবস্থা আরও কিছুদিন চলমান থাকলে বোর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা প্রকাশ করছেন হাওর পাড়ের কৃষকরা।

উপজেলার বৃহৎ বোর ফসল উৎপাদনের হাওর শনি মাটিয়ান, মহালিয়া, আঙ্গুরুলি, বর্ধিত গুরমা ও হালির হাওরে একই ধরণের সংকট তৈরি হয়েছে। এ হাওরগুলোতে কোন সেচ পাম্প নেই।

কৃষকরা জানান, মাটির নীচে পানির স্তর অনেক গভীরে হওয়ায় সেচ পাম্প বসাতে অনেক টাকা খরচ হয় তাদের। সে কারণে তারা সেচ পাম্প বসাতে পারছেন না। শনি হাওরপাড়ের গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক সেলিম আখঞ্জি বলেন, এ বছর ১২ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ফসলশীল ধান রোপন করেছেন।

তার জমিতে সেচ দেয়ার জন্য ২০২২ সালে একটি সেচপাম্প বসিয়েছিলেন। কিন্তু তিন বছর ধরে সেচ পাম্পটি দিয়ে তার জমিতে কোন পানি দিতে পারছিলেন না। তিনি জানান, পাম্পটিতে এ বছর কিছুদিন পানি দিতে পারলেও ভূগর্ভস্থ পানির স্থর অতিরিক্ত নীচে থাকার কারণে পাম্প দিয়ে সেচ দেয়া যাচ্ছে না।
মাটিয়ান হাওরপাড়ের আনন্দনগর গ্রামের কৃষক আব্দুল মন্নার বলেন, বৌলাই নদীতে কিছু পানি থাকলেও তার জমি মাটিয়ান হাওরের ভেতর অনেক দূরে থাকার কারনে তিনি সেচ দিতে পারছেন না। এই অবস্থায় তারা বৃষ্টির অপেক্ষাই করছেন।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বললেন, ইরি জমিতে প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন, কিন্তু পানির কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষক জমিতে পানি দিতে পারছেন না। তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.শরিফুল ইসলাম বলেন, সেচ সংকটের কারনে অনেক হাওরেই পানি দেয়া সম্ভব নয়। অনেক স্থানে সেচ সুবিধা থাকালেও নদীতে পানি নেই।…….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *