রহস্য উদঘাটন করলো কার্টুনে পাওয়া টুকরো টুকরো মরদেহের

আলমাস হোসেন:

কার্টুনে মোড়ানো টুকরো টুকরো মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দীর্ঘ অনুসন্ধান ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এ চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নিষিদ্ধ অ্যাপে মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে ঘনিষ্ঠতা, তারপর ব্ল্যাকমেইলের শিকার হওয়া—এই ঘটনারই ভয়াবহ পরিণতি ঘটেছে সাভারের যুবক সাজ্জাদ হোসেন সবুজ হত্যাকাণ্ডে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। এর আগে গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হলে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। পুলিশ জানায়, গত ৩ মার্চ সাভারের হেমায়েতপুর যাদুরচর এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় সাজ্জাদ হোসেন সবুজ (২৬) পিতা ইউসুফ আলীর ছেলে। ৪ মার্চ সকালে কেরানীগঞ্জের সড়কের পাশে কাটুন পরে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশ কে খবর দেয়। পুলিশ কাটুন খুলে দেখতে পায় দুইটি কাটুনে কয়েক টুকরো মরদেহ । এর পরেই পদ্মা সেতুর কাছে আরও একটি কাটুনে টুকরো টুকরো লাশের অংশ পাওয়া যায়।

নিখোঁজ হওয়া যুবকের পরিবার সাভার মডেল থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করলে বিষয়টি নজরে আসে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের। সেই জিডির সূত্র ধরে পরিবার নিখোঁজ যুবকের খন্ডিত টুকরো দেখে লাশের পরিচয় সনাক্ত করে।

এরপরই র‍্যাব, সিআইডি, ডিবি, পিবিআইসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা হত্যার রহস্য উদঘাটনে নামে।

তদন্তে পিবিআই জানতে পারে, নিষিদ্ধ এক অ্যাপের মাধ্যমে সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় সুমাইয়া আক্তার নামের এক নারীর। দুজনের মধ্যে দুই মাস ধরে কথোপকথন চলছিল, যা একপর্যায়ে আপত্তিকর পর্যায়ে পৌঁছে। এই সময় সাজ্জাদ গোপনে নগ্ন ভিডিও ধারণ করে তা দেখিয়ে সুমাইয়াকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন।

ব্ল্যাকমেইলের জালে পড়ে সুমাইয়া তার কথিত স্বামী রোকনুজ্জামানকে বিষয়টি জানালে তারা মিলে সাজ্জাদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩ মার্চ মোহাম্মদপুরে রোকনুজ্জামানের ভাড়া বাসায় সাজ্জাদকে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ধারালো ছুরি দিয়ে তাকে হত্যা করে মরদেহ ৯ টুকরো করে তিনটি কার্টুনে ভরে ফেলা হয় কেরানীগঞ্জ ও পদ্মা সেতুর কাছে।

পিবিআই তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সুমাইয়ার অবস্থান শনাক্ত করে। গত ৮ এপ্রিল ফেনী থেকে চুয়াডাঙ্গাগামী এক বাসে সুমাইয়া ও তার আত্মীয়কে গাবতলী থেকে অনুসরণ করে পিবিআইয়ের একটি দল। চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছেই তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে সুমাইয়ার দেখানো মতে খুনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী রোকনুজ্জামানকে তার খালুর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।

ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দীন জানান, প্রাথমিকভাবে গ্রেফতারকৃতরা হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।বর্তমানে আসামিরা জেলহাজতে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *