অভিযোগের অন্ত নেই ফেনী জেলা ছাত্রদলের বিভিন্ন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

 

ফেনী জেলা ছাত্রদলের বিভিন্ন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।পাহাড় পরিমান অভিযোগ কাধে নিয়েও এসব ছাত্রদল নেতাকর্মীরা স্বপদে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। অনেকই বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেও ছাত্রদলের কমিটিতে থেকে বীরদর্পে অপকর্ম করে যাচ্ছেন। ৫ আগস্টে দেশের পটপরিবর্তনের পর জেলা ছাত্রদলের শীর্ষ একাধিক নেতা জড়িয়ে পড়েছেন লুটপাট চাঁদাবাজি ও হাট ঘাট দখলে। ধর্ষণ মামলার আসামিও দখল করে রেখেছেন শীর্ষ পদ। এতে ছাত্রদলের সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। বির্তকিত ও বিবাহিতদের বাদ দিয়ে ত্যাগী ও স্বচ্ছদের নিয়ে জেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠনের জোর দাবি উঠেছে।

জানা গেছে, গত ২০১৮ সালে সালাউদ্দিন মামুনকে সভাপতি ও মোরশেদ আলম মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রদলের ৩৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে ৩৯৫ জনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি হয়। এ কমিটির একাধিক নেতাকর্মী বিয়ে করে ছাত্রত্ব শেষ করে সংসার জীবন শুরু করেছেন। কমিটির একাধিক নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উঠে। তবু এখনো এ বিতর্কিত কমিটি দিয়েই চলছে জেলা ছাত্রদলের কার্যক্রম।
জেলার সাধারণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা কমিটির যুগ্ন সম্পাদক কাজী নজরুল ইসলাম দুলালের বিরুদ্ধে রোকসানা লিপি নামে এক নারীকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। তখন দুলালের অপকর্ম নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। তখন তাকে দল থেকে দল থেকে বহিস্কারের আবেদন করেছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ন আহ্বায়ক এয়াকুব নবী। বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য দুলালের পদ সাময়ীক স্থগিত করা হয়েছিল। পরে রহস্যজনক কারণে দুলাল স্বপদে বহাল থাকেন।

ছাত্রদল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দীর্ঘ সংগ্রাম জেল জুলুম মামলা হামলার শিকার হওয়ার পর গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। দেশের এ পটপরিবর্তনের পর জেলা ছাত্রদলের একাধিক নেতা নেমে পড়ে লুটপাট আর চাঁদাবাজিতে। এমনকি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন নিজেও ফেনীর এ রহমান এসি মার্কেটসহ দুটি মার্কেট ও একটি কমিউনিটি সেণ্টার দখল করেন, পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র হত্যা মামলার অন্যতম আসামী ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সুসেন চন্দ শীল ও আওয়ামী লীগের ফেনী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কমিশনার খোকনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০ কোটি টাকার কাজ মামুন এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

কমিটির যুগ্ন সম্পাদক শওকত আলী জুয়েল পাটোয়ারী ও সাংগঠনিক সম্পাক জাকের হোসেন রিয়াদের বিরুদ্ধে একটি মোটরসাইকেলের শো-রুম লুটপাট ও রেডিক্স হোটেল মালিকের কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ রয়েছে। জুয়েল পাটোয়ারীর মাদক সেবনের ছবি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নিন্দার ঝড় উঠে। দপ্তর সম্পাদক আরিফুল হক সুমন বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে লুটপাট করার একাধিক ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত রয়েছে বিভিন্ন ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কাছে। কমিটির সহ সভাপতি মঈনুল হোসেন জ্যাকশনের বিরুদ্ধে রয়েছে ফেনীর ফাজিলপুরের এক জামায়াত নেতার বাড়ি ভাঙচুর লুটপাটের অভিযোগ। এছাড়ার কমিটির একাধিক নেতা ৫ আগস্টের পর লিপ্ত হয়েছে বেপরোয়া চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে। এতে ছাত্রদলের সুনাম চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।

জেলা ছাত্রদলের কমিটির একাধিক নেতা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় ক্ষুব্দ হয়ে উঠছে সাধারণ নেতাকর্মীরা। ফলে বিতর্কিত এ কমিটি বিলুপ্ত করে ত্যাগী ও সক্রিয়দের নিয়ে নতুন করে জেলা কমিটি করার দাবি তুলেছেন ছাত্রদলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

ছাত্রদলের একটি সূত্র জানায়, খুব সল্পসময়ে জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করা হবে। তবে বর্তমান কমিটির বিতর্কিত নেতাকর্মী সহ নেতৃত্ব প্রত্যাশী কাজী নজরুল ইসলাম দুলাল, জাকের হোসেন রিয়াদ, শওকত আলী জুয়েল পাটোয়ারী, সাইফুল ইসলাম জিকু, আরিফুল ইসলাম সুমন, রশিদ আহমেদ মজুমদার, দেলোয়ার হোসেন, নজরুল ইসলাম, আব্দুল হালিম মানিক ও তাজুল ইসলাম পাভেলসহ অনেকই নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের শীর্ষনেতাদের কাছে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। কমিটির বিতর্কিত এসব নেতারা কিছুতেই যেন নতুন কমিটিতে স্থান না পায় এ দাবি জোরালো হচ্ছে। বিষয়টি আমলে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের সুদৃষ্টি রাখার দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *