
স্টাফ রিপোর্টার:
যেখানে শেখ ইমরান ” সেখানেই চলে ঘুষ দুর্নীতি আর লুটপাট বাণিজ্যের মহোৎসব”। ভয়াবহ দুর্নীতি আর শেখ মোঃ ইমরান যেনো একে অপরের পরিপূরক। ইতোমধ্যে তিনি নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। প্লট, ফ্লাট, দামি গাড়ি, একাধিক ব্যাংক একাউন্টে শেখ ইমরান ডাকসাইটে একজন সফল মানুষ হিসেবে বিবেচিত। মুখে সুন্নতি লেবাস, ৫ ওয়াক্ত নামাজও আদায় করেন জামাতে। কিন্তু তাঁর টেবিলে ঘুষ ছাড়া মেলেনা সেবা, নড়েনা ফাইল। প্রতিটি ঘুষ দুর্নীতি আর রাজস্ব লুটের অবৈধ তরিকার টাকা ক্যালকুলেটরে হিসেব করে গুনে গুনে বুঝে নেন। নরসিংদী বিআরটিএ অফিসে শেখ ইমরান-ই সর্বেসর্বা, বাদবাকি সব হুকুমের গোলাম। তার বিরুদ্ধে রয়েছে কোটি কোটি টাকা অসৎ উপায়ে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। এছাড়া সরকারী নথিপত্র গায়েবের মতো গর্হিত অপরাধের সুস্পষ্ট অভিযোগ।
তাছাড়া ২০২৪ সালের জুলাই- আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে তিনি কিছু ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের মাঝে রাতের আঁধারে লগ্নি করেন লক্ষ লক্ষ কালোটাকা। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনাকালীন সময়ে শেখ ইমরান ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা। পতিত স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার শাসনামলে নিজেকে শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদেরের প্রিয়জন হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাঁর কর্মস্থলগুলোতে নিজস্ব ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি করে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি দালাল সিন্ডিকেট।
বলছিলাম নরসিংদী বিআরটিএর চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি:) শেখ মোঃ ইমরানের সংক্ষিপ্ত উপাখ্যান।
নরসিংদী বিআরটিএ’র এই কর্মকর্তা শেখ ইমরান ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে কেবল অর্থ লুটপাট করেছেন, তা নয়। নিজ দুর্নীতির প্রমাণ ঢাকতে গায়েব করে ফেলেছেন সরকারি নথিপত্র। হাজার হাজার ভলিয়ম গায়েব করার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম তদন্তে নামলেও দৃশ্যমান কোন শাস্তির ব্যবস্থা আজও হয়নি। শোনা যায় তার এক নিকট আত্মীয়র মধ্যস্থতায় বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে তৎকালীন দুদকের দুই কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে সেই তদন্ত ফাইল চাপা দিয়ে দেন।
২০২৪সালের ২৭শে জানুয়ারি শেখ মোঃ ইমরানের মৌখিক আদেশ ও দিকনির্দেশনায় নরসিংদী বিআরটিএ অফিসের উচ্চমান সহকারী শফিকুল ইসলাম ভূঞার উপস্থিতে বস্তা বস্তা ভলিউম গায়েব করা হয়। পরে সহকারী পরিচালক শেখ ইমরানের নির্দেশে ভেন্টিলেটর খুলে সাজানো হয় চুরির নাটক। যদিও সেই ভেন্টিলেটর দিয়ে মানুষের প্রবেশ বা বস্তা পাচার করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। আর যদি সত্যিসত্যি চোর প্রবেশ করত তাহলে অফিসের দামিদামি ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, পিসিসহ মূল্যবান সবকিছুই খোয়া যেতে। তাই এটা যে শেখ ইমরানের মস্তিষ্কপ্রসূত পরিকল্পিত চুরি তা বুঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
এরপর নামমাত্র থানায় অভিযোগ আর বিভাগীয় তদন্ত টিমকে কিনে নিয়ে শেখ ইমরান হয়ে যান, ” দুধে ধোয়া তুলসীপাতা”। বিআরটিএ’র নরসিংদী সার্কেলে শেখ ইমরান এর নির্দেশে ওপেন ঘুষ দুর্নীতি আর ভয়াবহ নথি গায়েবের ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনক কারণে সংস্থাটির উর্ধতন কর্তৃপক্ষ রয়েছেন নিশ্চুপ। ফলে শেখ হাসিনা দিল্লি পালিয়ে গেলেও আওয়ামীলীগের প্রিয়জন শেখ ইমরান ও তার যাবতীয় অনৈতিক কর্মকাণ্ডের একমাত্র রাজসাক্ষী উচ্চমান সহকারী মো. শফিকুল ইসলাম ভূঞা দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নরসিংদী বিআরটিএতে এখনো স্বমহিমায় উদ্ভাসিত।
আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের তথ্যমতে, নরসিংদী বিআরটিএ থেকে ২০২৪ সালের ২৭শে জানুয়ারি অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ৬৮ টি ভলিউম ও পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ২৭ টি ভলিউম রেকর্ড রুম থেকে গায়েব করে দেন সহকারী পরিচালক শেখ মো: ইমরান।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ভলিউম নম্বর, ৩৬, ৪১, ৪৮, ৫৮, ৭২, ১০১, ১০৬, ১১৬, ১১৭, ১২৩, ১২৫, ১২৬, ১২৭ এই ১৩ টি ভলিউম ছিল ম্যানুয়েল ড্রাইভিং লাইসেন্স ভলিউম। এইসব ভলিউমে ৩৬ নং ভলিউমে NDC5876 থেকে NDC6070 পর্যন্ত ১৯৪ টি ড্রাইভিং লাইসেন্স এর তথ্য ছিল, ৪১ নং ভলিউমে NDC6854 থেকে NDC7052 পর্যন্ত ১৯৮ টি, ৪৮ নং ভলিউমে NDC8228 থেকে NDC8421 পর্যন্ত ১৯৩ টি, ৫৮ নং ভলিউমে NDC10255 থেকে NDC10465 পর্যন্ত ২১০ টি, ৭২ নং ভলিউমে NDC13010 থেকে NDC13213 পর্যন্ত ২০৩ টি, ১০৬ নং ভলিউমে NDC19770 থেকে NDC19958 পর্যন্ত ১৮৮ টি, ১১৬ নং ভলিউমে NDC21701 থেকে NDC21896 পর্যন্ত ১৯৫ টি, ১১৭ নং ভলিউমে NDC21897 থেকে NDC22093পর্যন্ত ১৯৬ টি, ১২৩ নং ভলিউমে NDC23084 থেকে NDC23277 পর্যন্ত ১৯৩ টি, ১২৫ নং ভলিউমে NDC23474 থেকে NDC23672 পর্যন্ত ১৯৮ টি, ১২৬ নং ভলিউমে NDC23673 থেকে NDC23868 পর্যন্ত ১৯৫ টি, ১২৭ নং ভলিউমে NDC23869 থেকে NDC23909 পর্যন্ত ৪০ টি সর্বমোট ১৩ টি ম্যানুয়াল পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ভলিউমে ২২০৩ জন পেশাদার চালকের লাইসেন্স সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষিত ছিল। এছাড়াও ২০২২ সালের ৫ টি ভলিউমে NRD22001P001, NRD22002P001, NRD22003P001, NRD22004P001, NRD22005P001 উক্ত সিরিয়ালের ১০০০ জন পেশাদার চালকের তথ্য ছিল। ২০২৩ সালের ১০ টি ভলিউমে NRD23001P001, NRD23002P001, NRD23003P001, NRD23004P001, NRD23005P001, NRD23006P001, NRD23007P001, NRD23008P001, NRD23009P001, NRD230010P001 উক্ত সিরিয়ালের ২০০০ জন পেশাদার চালকের তথ্য ছিল। ২০২২ ও ২০২৩ সালের যে সকল ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে সেগুলোর তথ্য বিআরটিএ’র আইএস সফটওয়্যারে সংরক্ষিত আছে। ফলে পুনরায় ভলিউম তৈরা করা যেতে পারে। তবে ম্যানুয়াল ডাটার ভলিউমের ২২০৩ জন পেশাদার চালকের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে চলে গিয়েছে।
এছাড়াও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ভলিউম নম্বর ১১, ১৯, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩২, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৫০, ৫২, ৫৩, ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৬, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৮০, ৮২, ৮৩, ৮৫, ৮৬, ৮৭, ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯১, ৯২ মোট ৫৭ টি ভলিউমে প্রায় ১১৪০০ টি অপেশাদার চালকের তথ্য ছিল। এবং এগুলো ম্যানুয়াল ড্রাইভিং লাইসেন্স হওয়ায় এগুলোর নথি পুনরায় রিকভারি করাও সম্ভব হবে না বলে নিশ্চিত করেছেন বিআরটিএ’র বিভিন্ন সার্কেলের কর্মকর্তারা।
শুধুমাত্র অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ২০২২ সালের অনলাইন ভলিউম নং-০১, ০২, ০৪, ০৫, ০৭, ২০২৩ সালের ভলিউম নং-০২, ০৬, ০৭, ১০, ১১, ১২ নং ভলিউমের তথ্য পুনরায় বিআরটিএ’র আইএস থেকে নিয়ে পুনরায় ভলিউম তৈরি করতে পারবে।
বিষয়টি ধামাচাপা দিতে আদালতকে ব্যবহার করছে বিআরটিএঃ
২০২৪ সালের ২৮শে জানুয়ারি নরসিংদী বিআরটিএ’র উচ্চমান সহকারী/কম্পিউটার অপারেটর মো. শফিকুল ইসলাম ভুঞা নরসিংদী মডেল থানায় ৪৫৭ ও ৩৮০ পেনাল কোডের ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২১/২১ তারিখ-২৮ জানুয়ারী ২০২৪।
এসব ঘটনার বিভাগীয় তদন্তকর্তা ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক (ইঞ্জিঃ) স্বদেশ কুমার দাসকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন অফিসায়লভাবে। তিনি তদন্ত করে ২০২৪ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক (ইঞ্জিঃ) স্বদেশ কুমার দাস ওই সময় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করেছি। তবে আদালতে মামলা চলমান আছে, এই বিষয়ে ইতিমধ্যে পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেছে। তদন্তে কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। মামলা চলমান থাকায় আমরা এই বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে আমাদের কিছু সুপারিশ প্রদান করেছি। তবে কর্তৃপক্ষ চাইলে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরে এনে পুনরায় তদন্ত করতে পারে।
উক্ত ভলিউম গায়েব মামলা শেষে অভিযুক্ত ও মামলার বাদী নরসিংদী বিআরটিএ’র উচ্চমান সহকারী/কম্পিউটার অপারেটর মো. শফিকুল ইসলাম ভুঞা সংবাদমাধ্যমকে ওই সময় বলেছিলেন, নরসিংদী সার্কেলের ০১ নং রুমে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ভলিউম গুলো সংরক্ষিত থাকে। তবে ২৫ জানুয়ারী ২০২৪ সকাল ৮.৪৫ মিনিটে আমি অফিসে এসে দেখিতে পাই উক্ত রুমে কিছু ভলিউম কম আছে।
বিষয়টি আমি সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) শেখ ইমরান স্যারকে অবগত করি। তিনি আমাকে ভলিউম গুলো খোঁজার জন্য নির্দেশ দেন। পরে ২৭ জানুয়ারী অফিসে এসে দেখতে পাই ১ টি বস্তার ভিতর ১০/১২ টি ভলিউম ভরা, খালি ৩ টি বস্তা অফিসে রাখা এবং রেকর্ড রুমের সিলিং ভাঙ্গা। পরবর্তীতে খোঁজ করে দেখি প্রায় শতাধিক ভলিউম অফিস থেকে চুরি হয়ে গেছে।
তবে শফিকুল ইসলামের কথা অনুযায়ী ২৫ জানুয়ারী বেশ কিছু ভলিউম কম ছিল, কিন্তু ২৫ তারিখ রেকর্ড রুমের কোন দরজা জানালা অথবা ছাদ ভাঙ্গা ছিলনা। তাহলে ভলিউম কিভাবে কমলো সেই বিষয়ে স্পষ্ট কোন বক্তব্য দিতে পারেননি ওইসব ভলিউম চুরিবিদ্যার মাস্টারমাইন্ড শেখ ইমরানের সেকেন্ড ইন কমান্ড শফিকুল ইসলাম ভূঞা।
আর ওইসময় নরসিংদী মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) আঃ গাফফার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিলেন, মো. শুক্কুর আলী, মো. সাদেকুর রহমান, মোস্তফা কামাল, নাঈম, মো. শাহীন, আরিফ, মাহবুব ও আহসান নামে ৮ জনকে সন্দেহের কারণে উক্ত মামলায় আটক করেছেন। কিন্তু শেখ ইমরানের কালোটাকার কাছে বিক্রি হয়ে উক্ত তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত ওই ৮ ব্যক্তি প্রকৃত আসামী নয় বলে উল্লেখ করে গত ২৫ এপ্রিল ২০২৪ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছিলেন।
দীর্ঘদিন ধরে শেখ ইমরান সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দুর্নীতির আঁখড়া বানিয়েছেন নরসিংদী বিআরটিএ’কে। সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করে নিজেদের পকেট ভারি করেছেন শেখ ইমরানসহ বিআরটিএ’র নরসিংদীতে তার নিজস্ব চক্র।
ওইসময় ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ভলিউম ছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব করা হয় এসব ঘটনার একমাত্র মাস্টারমাইন্ড সহকারী পরিচালক( ইঞ্জি) শেখ মোঃ ইমরান।
এতোসব পরিকল্পিত ঘটনার জন্মদাতা, আওয়ামীলীগের পেতাত্মা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়ার এই মহানায়ক এখনো নরসিংদী বিআরটিএতে কীভাবে বহালতবিয়তে তা দেখে স্থানীয় সচেতন সমাজ ও ভুক্তভোগীরা বিষ্মিত ??
আসলেই কী শেখ ইমরান বিচারেই বাইরেই থেকে যাবেন? তার অবৈধ সম্পদের পাহাড়ের খোঁজতল্লাশি কী হবেনা, হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার ও তার সমস্ত দুর্নীতির আমলনামা কী লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যাবে