বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক (অর্থ) মোহাঃ শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: 

‎বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক (অর্থ) মোহাঃ শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে অঢেল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা ২০০৫ ইং সালে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সহকারী পরিচালক হিসাবে যোগদান করে। চাকুরী জীবনের শুরুতে মাত্র ৪৩০০ টাকা বেতনের স্কেলে চাকুরী করে এত অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের মধ্যেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক বাবার নুন আনতে পান্তা ফুরানোর ৮ ভাই বোনের সংসারের টাকার অভাবে যেখানে লেখা পড়া শেখানোই দুরহ ব্যাপার, সেখানে বর্তমানে মোহাঃ শফিকুল আলমের আলিশান বাড়ি, জমি ব্যাংকে টাকা সহ অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়ায় রীতি মতো এলাকায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। মাত্র কয়েক বছর আগে প্রত্যন্ত গ্রামের সহজ সরল ছেলে প্রায়ই গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে যেত, সেখানে বর্তমানে বসন্তের কোকিলের মত হয়তবা কোন ঈদে কিছু সময়ের জন্য অতিথির মত হঠাৎ হাজির হয়ে ভাইদের হয়তবা ঈদের পাজামা পাঞ্জাবী দিয়ে গ্রাম থেকে চম্পট।

‎কে এই শফিকুল ইসলাম: বিভিন্ন তথ্যে এবং আর এস খতিয়ানের তথ্য অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জানা যায় চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকশা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের মৃত সাজেমান আলীর পুত্র মোহাঃশফিকুল ইসলাম। আনুমানিক ৩/৪ একর জমির প্রত্যান্ত গ্রামের গরীব কৃষক সাজেমান আলীর স্ত্রী এবং ৮ সন্তান নিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরানো বাবা অন্য ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিখাতে না পারলেও গ্রামের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন শফিকুল আলমকে। ৫ ভাই ৩ বোনের মধ্যে শফিকুল আলম ৪র্থ। বড় ভাই মিনারুল আলম গ্রামে সিজেনালী ফলের ব্যবসা করে কোন মতে খেয়ে পরে বেঁচে আছে। মেঝে ভাই মোঃ নজরুল ইসলাম এবং সেজে ভাই আনারুল গ্রামে কৃষি কাজ করে টেনে টুনে সংসার চালায় আর ছোট ভাই মোঃ ইউসুফ গ্রামে সার ঔষুধের দোকান। শফিকুলের বড় ভাই মিনারুল ইসলাম জানান ১৯৮৯ সালে শফিকুল এসএসসি পাশ করে এরপর চট্টগ্রামে লেখাপড়া করেছে। ছাত্র জীবন থেকেই মিধাবী শফিকুল অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া শিখেছেন। আমি শফিকুলকে ১৫০০ টাকা দিয়েছি এই টাকা দিয়ে শফিকুল তিন মাস লেখাপড়া এবং হোস্টেলের খরচ চালাইয়াছেন বলেও জানান শফিকুলের বড় ভাই মিনারুল ইসলাম। পারিবারিক জীবনে ১ম স্ত্রীর ছেলে মেয়ে না থাকার কারনে ২য় বিয়ে করেছেন মোঃ শফিকুল আলম, দ্বিতীয় স্ত্রীর একটি কন্যা সন্তান আছে বলেও জানান শফিকুলের বড় ভাই। তবে দ্বিতীয় বিয়ে কোথায় করেছেন তা তিনি বলতে পারেন না।

‎মোঃ শফিকুল আলমের সম্পদের বিবরণঃ বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা ও বর্তমানে পরিচালক অর্থ হিসাবে সদর দপ্তরে কর্মরত মোহাঃ শফিকুল আলমের সঙ্গে একই ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০১৮ ইং সালে পরিচালক পদে পদোন্নতি পেলেও শফিকুল আলম পরিচালক হিসাবে পদোন্নতি পান ২০২৪ ইং সালে। বিভিন্ন মাধ্যমে এবং জমির খতিয়ান অনুসারে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার সম্পদের মধ্যে রাজশাহীর নওদাপাড়ায় চার কাঠা জমি ৭৮ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্রয় করে বর্তমানে পাঁচ তালা তিন ইউনিটের বাড়ী নির্মান করছে, যার আনুমানিক খরচ ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা। ২০২২ ইং সালের শেষে এবং ২০২৩ ইং সালের প্রথমে রাজশাহী জেলার পবা উপজেলা বাউন্ডারি সংলগ্ন ৩ কাঠা ফাঁকা ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্রয় করে বলে জানা যায়। জামালপুরে র‍্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ন র‍্যাবে থাকা কালীন সময়ে জমি ক্রয় করে তার গাড়ী চালকের নামে, যদিও সেই জমি পরে তার গাড়ী চালক দখল করে নিয়েছে। এছাড়াও তার নামে বেনামে অনেক সম্পদ এবং ব্যাংকে নগদ টাকা ছাড়াও শেয়ার বাজারে কয়েক লক্ষ টাকার শেয়ার রয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

‎নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অনেক কর্মকর্তারা জানান কি বলব ভাই উনি নাকি অনেক সৎ মানুষ, উনি পরিচালক অর্থ হিসাবে যোগদান করার পর মহাপরিচালক মহোদয়কে এমন ভাবে বুঝিয়েছেন যে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে উনিই শুধু সৎ, উনার কারনে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিটি অফিসার কষ্টের মধ্যে আছে। আগে প্রতিটি জেলায় এবং ব্যাটালিয়নে আপ্যায়ন বাবদ কিছু টাকা পাওয়া যেত, যা দিয়ে আমরা অতিথিদের আপ্যায়ন করাতাম, বর্তমানে এক কাপ চা কাউকে খাওয়াতে হলেও আমাদের ব্যক্তিগত পকেট থেকে খাওয়াতে হয়। উনি একজন সৎ মানুষ তা একজন সৎ মানুষের এত অঢেল সম্পদ কিভাবে হয় তা আপনারাই জাতির কাছে প্রশ্ন করুন।

‎শফিকুল আলমের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য মোবাইলে ৫ নং মহল্লাদার পারচৌকা গ্রাম পুলিশ মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইলে কল দিয়ে শফিকুলের নাম বললে প্রথমে তিনি না চিনলে পরে তার পিতার নাম বললে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান আসলে ওর বাবা এবং বড় ভাই ওকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে, আগে মাঝে মধ্যে গ্রামে আসত, শুনেছি আনসারের বড় বিভাগীয় অফিসার শফিকুল, গত ১০/১২ বছর ধরে গ্রামে আসেনা। ধন সম্পদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান ওর ভাই ব্রাদার এত ভাল নাই, বড় ভাই মিনারুল রোগে শোকে কোন মতে আম জামের ব্যবসা করে। ওর কোন ভাইই খুব একটা সচ্ছল নয়। তেমন বেশী কোন জমি জমা নাই, ঐ যা আছে, কোন মতে খেয়ে পরে বেঁচে আছে আরকি।

‎শফিকুলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তার বড় ভাই মিনারুল জানান এবার ঈদে আসছিল, আমাদের খোঁজ খবর খুব একটা নেয়না, তবে ঈদের সময়ে আমাদের পাজামা পাঞ্জামী দেয়। সম্পদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান আমি একটা টিনশেড বাড়ীর কথা শুনেছি, তবে জমি বা বিল্ডিংয়ের বিষয়ে আমার জানা নাই, ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান ছোট বেলা থেকে ও খুব হিসাবি, মানুষের সঙ্গে মিশতনা, খুব কষ্ট করে পড়া লেখা শিখেছে, বড় বউয়ের ছেলে মেয়ে না হওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করেছে এটা শুনেছি, একটা বাচ্চা হয়েছে, তবে কোথায় বিয়ে করেছে এটা আমি বলতে পারবনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *