
স্টাফ রিপোর্টার:
যশোরের ঝিকরগাছা সাব -রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারা খাতুন অভয়নগরের মত অফিসটিকে ঘুষ দুর্নীতি আর দলিল বাণিজ্যের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে।
ইতোমধ্যে নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। বিলাসবহুল জীবন লীড করেন, চড়েন দামি গাড়িতে।
এ অফিসে মঞ্জুয়ারার কথায় শেষ কথা।
মঞ্জুয়ারার চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারলে কাগজপত্রের নানান ভুল ত্রুটির দোহায় দিয়ে দাতা- গ্রহীতাকে ঘুরাতে থাকেন মাসের পর মাস।
তার চাহিদা মোতাবেক টাকা পেয়ে গেলে তিনি প্রকাশ্যে গুণে গুণে সে টাকা নিজ হেফাজতে রেখে দলিলের পাতায় দেন বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন।
আর সেই সাংকেতিক চিহ্ন দেখে সাব- রেজিস্ট্রার বুঝতে পারেন গ্রীন সিগনাল, ফলে এসব দলিল সাব -রেজিস্ট্রার সই করেন চোখ বন্ধ করে।
মঞ্জুয়ারা খাতুন অফিস চলাকালীন সময়ে এখনে ঘুষের হাট বসিয়ে থাকেন। অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারা ধীর্ঘদিন ধরে কয়েকজন ক্যাডারকে ক্যাশিয়ার নিয়োগ দিয়ে হাট থেকে ইজারাদারের মতো ঘুষের টাকা উঠিয়ে থাকেন প্রকাশ্যে।
মঞ্জুয়ারা গং সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। বিদায়ী সাব- রেজিস্ট্রার মোস্তাক আহম্মেদ শাকিল বিষয়টি জানলেও তিনি সন্ধ্যায় নিজের ভাগ বুঝে নিয়ে চুপচাপ কেটে পড়তেন।
এখন তো আবার মঞ্জুয়ারার সামনে চলে এসেছে আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ। গত পক্ষে যোগদানকারী সাব- রেজিস্ট্রার মোঃ শাহীন আলম তিনি ঢাকা মোহাম্মদপুর ফেরৎ ঘুষ বাণিজ্যে মাস্টার মাইন্ড। তাই সবাই বলছে এ যেনো, ” সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি “!!
সদ্য যোগদানকারী সাব- রেজিস্ট্রার শাহিন আলম মোহাম্মদপুরে থাকাকালীন কোটি কোটি টাকার দূর্নীতি করে গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
কোনো অভিযোগ ছাড়াই ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এক আদেশে আইজিআর মোঃ নূর ইসলাম মহোদয় শাহিন আলমকে যশোরের এই ঝিকরগাছায় বদলি করেন।
আর দুর্নীতিতে একের পর এক সেঞ্চুরি হাঁকানো সাব- রেজিস্ট্রার শাহিন আলমকে পেয়ে যারপরন্যায় বিমুগ্ধ ঘুষ দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড মঞ্জুয়ারা খাতুন।
তাই খুব খোশমেজাজে নতুন বসকে মোহাম্মদপুরের ন্যায় খুশি করতে ধুমসে চালিয়ে যাচ্ছেন ঘুষ দূর্নীতি আর দলিল বাণিজ্য।
আমাদের ঝিকরগাছা প্রতিনিধি জানান, কল্যাণ তহবিলের নামে ঝিকরগাছা দলিল লেখক সমিতি রেজিস্ট্রি খরচ দেখিয়ে দলিল প্রতি দুই হাজার টাকা আদায় করছে।
প্রতিমাসে প্রায় দেড় হাজার দলিল ঝিকরগাছা অফিসে রেজিস্ট্রি হয়।
এরমধ্যে বেশির ভাগ দলিল হেবাবিল এওয়াজ, আমমোক্তার নামা, দানপত্র ও ঘোষণাপত্র দলিল। ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
ভুক্তভোগীরা বলেন, দলিলের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও সেরেশতা ছাড়া মঞ্জুয়ারার সংকেত না পেলে সাব-রেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রি করেন না।
সে হিসেবে প্রতিমাসে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় ৩০/ ৪০ লক্ষ টাকা।
অফিসের নকলনবিশ অ্যাসোসিয়েশন দলিল প্রতি আদায় করে ২০০ টাকা করে। সে হিসেবে আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লক্ষ টাকা। দলিলের সার্টিফাইড কপি উত্তোলন বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া হয় দেড় হাজার থেকে শুরু করে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা।
অথচ সরকারি ফিস মাত্র ৮ থেকে ৯শ’ টাকা। হিসেব মতে প্রতি মাসে এক হাজারটি দলিলের বিপরীতে অন্তত; ২০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে সিন্ডিকেট।
পড়চা, ওয়ারেশ কায়েম সার্টিফিকেট ও দানপত্র দলিলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলিল প্রতি ২ হাজার থেকে শুরু ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মঞ্জুয়ারা গং। মাস শেষে সব মিলেয়ে কোটি টাকারও বেশি আদায় করছে মঞ্জুয়ারা সিন্ডিকেট।
আদায়কৃত এসব টাকার বড়ো অংশ পান সাব -রেজিস্ট্রার।
অভিযোগ রয়েছে, বিতাড়িত আওয়ামী সরকারের আমলে গড়ে ওঠে এই সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের প্রধান সমন্বয়ক ও মাস্টার মাইন্ড জুম্মান হোসেন সোহেল নকলনবিশ হওয়া সত্বেও তার জন্য অফিসের ভেতরে আলাদা একটি কক্ষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারার নির্দেশে সভাপতি আকবর, মহুরী জহুরুল হক ও নেছার আলী সিন্ডিকেট টাকা আদায় করছে বছরের পর বছর। ক্যাশিয়ার হিসাবে পরিচিত রয়েছে দলিল লেখক জহুরুল হকের। মঞ্জুয়ারার নেক-নজরে থেকে এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছেন তারা।
এছাড়া আওয়ামী যুবলীগের পরিচয়ে এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছে সাদ আমিন রনি-সাহাজুল ইসলাম দীপু-সন্টু। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,ঝিকরগাছা সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে দীর্ঘদিন সরকার নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে কোনো সেবা পাওয়া যায় না।
সেবা পেতে হলে মঞ্জুয়ারার নির্দেশ মোতাবেক দলিল লেখক সমিতির সকল চাহিদা পরিশোধ করতে হয়।
সচেতন এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগীরা বলেন, অফিস শেষে বাসা বাড়িতে ফেরার সময় সাব- রেজিস্ট্রার ও মঞ্জুয়ারাকে তল্লাশী করলেই ঘুষ দূর্নীতির অবৈধ টাকাসহ এঁদেরকে হাতেনাতে দুদক গ্রেফতার করতে পারবে।