আব্দুর রহিম জয়:
বগুড়ায় মাঠের পর মাঠ সোনালী ধানের শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। দিগন্ত জুড়ে সোনালী ধানে কৃষকের চোখে মুখে ছড়াচ্ছে হাসির ঝিলিক। জেলায় প্রায় ৩০ ভাগ ধান কাটার উপযোগী হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় শুরু হয়েছে আগাম জাতের বোরো ধান কাটা ও মাড়াই। কেউ ধান কাটছেন। আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭৪ মেট্রিকটন। চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর ১ লাখ ৮৭ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩২ মেট্রিকটন। জেলায় এবার আটাশ, উনত্রিশ, ব্রি-৮১, ব্রি-৮৮, ব্রি-৮৯, ব্রি-১০০, কাটারিভোগ, কাজল লতা, শুভলতা, জিরাসাইল ও হাইব্রিড জাতের ধান রোপন করেছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, শাজাহানপুর, শেরপুর, শিবগঞ্জ, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি ও গাবতলীসহ ১২টি উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
সারা দেশে ধান-চালসহ বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদনের উদ্বৃত্ত জেলা হিসাবে বগুড়ার খ্যাতি রয়েছে। জেলার বেশির ভাগ মাঠগুলো এখন সোনালী রঙে অপরূপ শোভা ছড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে বোরো মৌসুমের আগাম জাতের ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছনে। বগুড়া অঞ্চলে বর্তমানে বিপুল পরিমানে শাকসবজির উৎপাদন শুরু হলেও কৃষি অর্থনীতির চাকা সচলে মুখ্য ভুমিকায় থাকে বোরো ধান। প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও বর্গা চাষি এবং কৃষি শ্রমিক মিলিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকার সংগ্রাম চলবে বোরো মৌসুমে। তবে পুরোদমে ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু হতে আরো ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে। কিন্তু আগাম জাতের বোরো ধান আগেই পাকতে শুরু করে। অনেক কৃষকই দ্রুত বাজারে ধান তুলতে এবং ভালো দাম পেতে এই জাত বেছে নেন। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বেশির ভাগ জমিতে আগাম জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে। এই ধান গড়ে বিঘাপ্রতি ফলন হচ্ছে ২০ থেকে ২২ মণ।
উপজেলার বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি বেশি হলেও আগাম বিক্রির সুযোগ থাকায় কৃষকরা কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পারবেন।
নন্দীগ্রাম সদর ইউনিয়নের হাটলাল গ্রামের কৃষক সহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর ৮ বিঘা জমিতে আগাম জাতের বোরো ধান চাষ করেছেন। তিনি ধান কাটা শুরু করেছেন। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে শ্রমিকের দাম এত বেশি যে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রায় সাত হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। যদি ধানের বাজার ভালো না থাকে তাহলে লাভের সম্ভাবনা খুবই কম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭৪ মেট্রিকটন। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আগাম জাতের বোরো ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। তবে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পুরোদমে বোরো ধনা কাটা শুরু হবে।
তিনি আরো বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে কৃষকরা ধানের বাজারমূল্য ভালো পাবেন। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পাকা ধান দ্রুত কাটার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।