
স্টাফ রিপোর্টার:
কক্সবাজার জেলা পরিষদের নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ এবং একাধিক প্রতারণার মামলার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তিনি এখনও বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন—এটি প্রশাসনিক দুর্বলতা না কি প্রভাবশালীদের ছত্রছায়া, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে।
হত্যা মামলার আসামি হয়েও সরকারি চাকরিতে!
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, রেজাউল করিম কক্সবাজার দায়রা আদালতে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলা নং ৫২৩/২০২৩-এর আসামি। মামলার বাদী মমতাজ বেগম কর্তৃক দায়েরকৃত এই মামলায় তিনি ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় অভিযুক্ত। এতো বড় অপরাধে অভিযুক্ত হয়েও কীভাবে তিনি সরকারি চাকরিতে বহাল থাকেন, এ নিয়ে জনমনে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।
লিজ ও বরাদ্দের নামে টাকা আত্মসাৎ
রেজাউলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ—জমি বরাদ্দ ও দোকান লিজ দেওয়ার নাম করে মোটা অংকের ঘুষ নেওয়া। চকরিয়া পৌর বাস টার্মিনালের যাত্রা ছাউনি ও হারবার বাজার এলাকায় জেলা পরিষদের জমি বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি তিন লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন। এমনকি ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তিপত্রও করা হয়, যার নম্বর ০৬/০৫/২০১৯।
জেলা পরিষদের সার্ভেয়ারের পদে থাকা অবস্থায় সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর সহায়তায় আরও ৩ লক্ষ ৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ
২০১৮ সালে ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দিদারুল ইসলামের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে দুই দফায় ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন রেজাউল করিম। একই কায়দায় ২০১৬ সালে সদর উপজেলার পি.এম খালীর সাবেক ইউপি সদস্য আব্বাস উদ্দিনের কাছ থেকে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসার জন্য বরাদ্দ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেন।
কোটি টাকার দুর্নীতির পাহাড়
গোপন সূত্রে জানা যায়, এই কর্মকর্তা এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রকল্প বরাদ্দ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রায় কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন।
সরকারি টাকা ব্যক্তিগত খরচে ব্যবহার!
২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট উখিয়া উপজেলার ডাকবাংলোর দোকান বরাদ্দের জন্য ১৪ জনের কাছ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে মোট পে-অর্ডার নেওয়া হয়। অথচ এসব সরকারি অর্থ সোনালী ব্যাংক (হিসাব নং: ২০০০০০০০০০০০২)-এর মাধ্যমে জমা নেওয়ার পর তা নয় বছর ধরে নিজের হেফাজতে রেখে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেছেন রেজাউল।
উচ্চমহলের ছত্রছায়া?
এইসব গুরুতর অভিযোগ জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারসহ একাধিক দপ্তরে অভিযোগ আকারে পৌঁছালেও রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে কোনও দৃশ্যমান শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে তিনি প্রশাসনিক তদন্ত থেকে নিজেকে বারবার রক্ষা করে চলেছেন।
সচেতন নাগরিকদের দাবি: কঠোর তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
সচেতন মহল প্রশ্ন তুলছে—একজন দুর্নীতিবাজ, হত্যা মামলার আসামি কীভাবে সরকারি চাকরিতে বহাল থাকতে পারে? তাঁর পেছনের “খুঁটির জোর” কারা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। অবিলম্বে এই দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সম্পদের হিসাব তদন্ত করে রাষ্ট্রীয় অর্থ ফিরিয়ে আনার দাবি উঠেছে সর্বস্তর থেকে।