
স্টাফ রিপোর্টার:
হবিগঞ্জ জেলার মাদবপুর থানা বার চান্দুরা গ্রামের মোছাঃ রুমা বেগম ২০০৯ সালে একই বাড়ির চাচাতো ভাই সিরাজুল ইসলামের সাথে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে রয়েছে তিনটি সন্তান: বড় ছেলে সামসুল ইসলাম (বয়স ১৫ বছর), মেজো ছেলে রিয়াদুল ইসলাম (বয়স ১১ বছর) এবং ছোট মেয়ে ইভা ইসলাম (বয়স ০৭ বছর)। তিন সন্তান ও স্বামী নিয়ে সুখী ছিলেন রুমা বেগম। রুমা বেগমের স্বামী দীর্ঘদিন যাবৎ সৌদি আরবে চাকরি করেন।
প্রতি বছরই দেশে এসে পরিবারের সাথে সময় কাটান রুমার স্বামী সিরাজুল ইসলাম। রুমার এই সুখ দেখে সহ্য হয় না এলাকার বখাটে বিল্লাল হোসেনের। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ রুমা বেগমকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে তিন দিন আটকে রাখে বখাটে লম্পট এই বিল্লাল হোসেন। এসময় রুমা বেগমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে বিল্লাল হোসেন।
এ বিষয় রুমা বেগমের মা মাদবপুর থানায় রুমা নিখোঁজ হওয়ার সাধারণ ডায়েরি করেন ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, যার ডায়েরি নং ৬৪৪। নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর কৌশলে পালিয়ে আসে রুমা বেগম। পরে পরিবারের সবার সাথে আলোচনা করে মাদবপুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন রুমা বেগম। মামলা নং ২২/৬৪, তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। নারী ও শিশু দমন আইন ২০০০ সংশোধনী ২০০৩।
মামলার খবর শুনে বিল্লাল ও তার সঙ্গীরা মামলা তুলে না নিলে রুমা ও তার স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। রুমা বেগম মামলা তুলে না নেওয়ায় বিল্লাল হোসেন গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ হবিগঞ্জ আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন যে রুমা বেগম ধর্ষণকারী বিল্লালের স্ত্রী। এর মধ্যে নকল প্রমাণ সংগ্রহ করে ফেলে বিল্লাল এবং বলে যে তার সাথে রুমার কোর্টে বিয়ে হয়েছে।
নকল প্রমাণগুলোর বিরুদ্ধে নির্যাতিত রুমা বেগম হবিগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করেছেন যে ওই নকল কোর্ট কাবিনের সাক্ষরই তার নয়। যা বর্তমানে সিআইডির অধীনে। ধর্ষক বিল্লালের মামলাটি তদন্তের জন্য মাদবপুর থানায় পাঠালে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই শাহ আলম। শাহ আলম ধর্ষিতা রুমা বেগম এবং তার স্বামী সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে না গিয়ে থানায় বসে চার্জশিট তৈরি করে এবং তা আদালতে পাঠায়।
এসআই শাহ আলম ধর্ষিতা রুমা বেগমের কাছে তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছিল। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ার কারণে ধর্ষক আসামি বিল্লালের মামলার হুবহু চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। রুমার সন্তান মোট ৩ জন অথচ চার্জশিটে লিখেছে রুমার মোট সন্তান ২ জন। রুমার বিয়ে হয়েছিল ২০০৯ সালে, প্রায় ১৬ বছর অথচ চার্জশিটে লিখেছে রম্নমার বিয়ে হয়েছে মাত্র ৭-৮ বছর।
রুমা বর্তমানে সিরাজুল ইসলামের সংসার করছেন অথচ এসআই শাহ আলম লিখেছে তার উল্টো। আসলে ধর্ষিতা রুমার মাদবপুর থানায় দায়েরকৃত মামলাটিকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্যেই আদালতে মামলা এবং এসআই শাহ আলম দিয়ে মিথ্যা চার্জশিট তৈরি করে আদালতে পাঠায়। ধর্ষিতা রুমা বেগমের মামলায় বর্তমানে ধর্ষক বিল্লাল জেল হাজতে রয়েছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বলেন, “আমার স্বামী দীর্ঘদিন সৌদি আরবে থাকেন। স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে অত্যন্ত সুখের সংসার ছিল আমার। কিন্তু লম্পট ধর্ষক বিল্লাল আমার সব কিছুই শেষ করে দিল।” রুমা বেগম কেদে কেদে বলেন, “ধর্ষক বিল্লালের চাইতেও বেশি খারাপ এসআই শাহ আলম। তিন লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রিপোর্ট দাখিল করেছে।” এ বিষয়ে এসআই শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমার কোনো ভুল হয়ে থাকলে তা ঠিক করে নেওয়া যাবে। তবে টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।”
এসআই শাহ আলমের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী রুমা বেগম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, সিলেট বিভাগীয় ডিআইজি এবং হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের বরাবর লিখিত আবেদন করবেন বলে জানা গেছে।