
আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে আশুলিয়ায়। গোটা এলাকাজুড়ে এখন চলছে খোকা মুহাম্মদ চৌধুরীর অঘোষিত শাসন। চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি করেছেন তিনি। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের গনঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডের এজাহারভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসনের নিরবতায় তার দাপট অব্যাহত রয়েছে।
রাজনৈতিক মদদেই উত্থান
বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় আশুলিয়া থানা যুবলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম ভূঁইয়ার ভাস্তি জামাই পরিচয়ে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পান খোকা চৌধুরী। সেই পরিচয় আর পেশীশক্তির জোরেই জমি দখল, হুমকি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন তিনি।
ভুয়া প্রেসক্লাবের কূটকৌশল
৫ আগস্টের ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডের পর, নিজেকে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে পরিচিত করিয়ে মূলধারার সাংবাদিকদের চাপে ফেলেন খোকা মুহাম্মদ। তারপর প্রতিষ্ঠা করেন একটি ভুয়া ‘আশুলিয়া প্রেসক্লাব’, নিজেকে আহ্বায়ক ঘোষণা করে। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে চলে ব্যাপক চাঁদাবাজি, আর প্রকৃত সাংবাদিকদের যারা তার সাথে যুক্ত হতে অস্বীকৃতি জানান তাদের ‘অপসাংবাদিক’ বলে অপমান করা হয়।
সরকারি জমি দখল ও চাঁদাবাজি
প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের মালিকানাধীন বাইপাইল প্লাজার পাশে, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে বিভাগের সরকারি জমি দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে আটতলা ভবন। সেই অবৈধ ভবন ‘আশুলিয়া প্রেসক্লাব’ নামে ব্যবহার করে চলছে শিল্প ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়। চাঁদা না দিলে দোকান উচ্ছেদ ও রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি নিত্যদিনের ঘটনা।
হামলা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা
চলতি বছরের ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাইপাইল মার্কেটে ভূমিদস্যু খোকা মুহাম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে চালানো হয় সশস্ত্র হামলা। মার্কেট ম্যানেজার হাবিবুর রহমানকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ঘটনার পর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও প্রশাসনের ভূমিকা ছিল নীরব, ফলে ভুক্তভোগীরা আদালতের শরণাপন্ন হন।
অভিযুক্তদের পরিচিতি
খোকা মাহমুদ চৌধুরী: ৫ আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
উত্তরা পূর্ব থানা ১১(১২)২৪ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি (মামলা নম্বর ৮২)।
কাফরুল থানার ১০(৩)২৫ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি (মামলা নম্বর ১১০)।
সন্ত্রাসী ভূমিদস্যু চান্দা খোকার সহোযোগি ওবায়দুর রহমান লিটন: ছিনতাই মামলার আসামি, জনতার হাতে আটক। আশুলিয়া থানার ৫২(২)২৩ মামলায় এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি।
সন্ত্রাসী ভূমিদস্যু চান্দা খোকার সহোযোগি নুরুল ইসলাম: ছাত্র হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে।
আশুলিয়া প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক লাইজু আহমেদ চৌধুরী বলেন:
বাইপাইলে হকারি করেই ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালীদের কাতারে নাম লেখান লোকমান হোসেন খোকা ওরফে খোকা মুহাম্মদ চৌধুরী। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হলেও আশুলিয়ার গাজীরচটে, আশুলিয়া থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মঈনুল ইসলামের ভাই সোলেমান ভুইয়ার মেয়েকে বিয়ের সুবাদে হয়ে ওঠেন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। সেই ধারাবাহিকতায় আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে অল্প সময়ের ব্যবধানে হয়ে ওঠেন অর্থবিত্তের মালিক।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা হামলা মামলার আসামি হয়েও তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যে।
নির্বিঘ্নে যাচ্ছেন থানায়ও। আবার কখনো দেখা যাচ্ছে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে চাচক্রেও। তার পরও তিনি অধরা। তাকে খুঁজে পান না মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা! সরকারের চলমান ডেভিল হান্ট অপারেশনেও তিনি ‘ভিআইপি আসামি’।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম আহমেদ।
আলোচিত এই আসামির নাম লোকমান হোসেন খোকা ওরফে খোকা মুহাম্মদ চৌধুরী। মামলার এজাহারে নাম উল্লেখ করা হয়েছে লোকমান হোসেন খোকা ওরফে হকার খোকা (৪৯)। তাঁর বাড়ি আশুলিয়ার বাইপাইল বাগবাড়ি এলাকায়।
হত্যা মামলার আসামি হয়েও অবাধে থানায় প্রবেশ এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে খোশগল্পের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিব্রত হন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা থানায় নতুন এসেছি। কে হত্যা মামলার আসামি আর কে মুখোশধারী ডেভিল তা প্রাথমিকভাবে ঠাওর করা মুশকিল।” এ ব্যাপারে পরবর্তী সময়ে নিজেরা সতর্ক থাকবেন বলেও জানান তিনি।
সাংবাদিক সমাজের প্রতিবাদ
আশুলিয়ার প্রকৃত সাংবাদিকরা খোকা মুহাম্মদ এর তথাকথিত ‘প্রেসক্লাব’ ও তার সব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। তারা বলেন, এ ধরনের অপসংগঠন আশুলিয়ার সাংবাদিকতার মানমর্যাদা ধ্বংস করছে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করছে।
প্রশাসনের নিরবতা প্রশ্নবিদ্ধ
জনগণ আজ জানতে চায় – কবে থামবে খোকা মুহাম্মদ চৌধুরীর দুর্দান্ত প্রতাপ ? কেন প্রশাসন নীরব ? আইনের শাসন কি আশুলিয়ায় কেবল নামে-মাত্র বিদ্যমান ? তবে কি আশুলিয়ায় আইনের শাসন শেষ ? খোকার শাসনই কি এখন বাস্তবতা ?