স্টাফ রিপোর্টার:
যশোর বিআরটিএ অফিসে দালালের মাধ্যমে ঘুষ ছাড়া সেবা মেলে না। সেবাগ্রহীতাদের জিম্মি করে ঘুষ আদায় করে একটি দালাল চক্র। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় সময় অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে বিভিন্ন সময় একাধিক দালালদের আটক করে সাজা প্রদান করা হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় বিআরটিএর কর্মকর্তারা। চাকরি যাওয়ার ভয়ে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে সরাসরি ঘুষ নেয় না। ঘুষ নেয় দালালদের মাধ্যমে।
এখানে বলে রাখা ভালো, দালালদের টাকা দিলে পরীক্ষা ছাড়াই অথবা নামমাত্র পরীক্ষায় যদি পাশ দেওয়া হয় তাহলে কী বোঝা যায়? পাশ অথবা ফেল করানো তো দালালরা পারবে না। পাশ অথবা ফেল দেখাতে অবশ্যই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রয়োজন। দালালদের মাধ্যমে টাকা দিলেই ড্রাইভিং লাইসেন্স নতুন বানানো কিংবা রিনিউ হোক না কেন, তাদের পাশ করে দেওয়া হয়। আর দালালদের টাকা না দিলে তাদের দেখানো হয় ফেল।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, দুই বার ভালো পরীক্ষা দেওয়ার পরেও আমাকে ফেল দেখানো হয়েছে কারণ আমি দালালদের টাকা ঘুষ দেই নাই। বাধ্য হয়েই দালাল হুমায়ুন কবির মামুনকে টাকা দেওয়ার সাথে সাথে নামমাত্র পরীক্ষায় পাশও হয়েছি। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের মতো মানুষদের দালালদের কাছে যেতেই হয়।
যশোর বিআরটিএ অফিসে দালালদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দালাল হচ্ছে সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া এলাকার গোলাম রব্বানী বিশ্বাসের ছেলে মাহাবুব হাসান শিমুল, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে হুমায়ুন কবির মামুন, যশোরের অভয়নগর উপজেলার মশরহাটি গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে আবদুল ওয়াদুদ পলাশ ও যশোর সদর উপজেলার বিরামপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে শফিকুল ইসলাম। দালালরা বিভিন্ন সময় আটক হয় কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই বেরিয়ে আসে।
এই দালালদের লালন পালন করেন যশোর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক এএসএম ওয়াজেদ হোসেন। সহকারী পরিচালক এএসএম ওয়াজেদ হোসেনের নির্দেশ ছাড়া কোনো কাজই করতে পারে না পরিদর্শকরা। এ নিয়ে যশোর জেলার বিআরটিএ অফিসে প্রায় দেখা যায় অসন্তোষ।
সহকারী পরিচালক এএসএম ওয়াজেদ হোসেন একজন ঘুষখোর প্রকৃতির মানুষ। তিনি টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না। যশোর জেলার সাধারণ মানুষের বক্তব্য, দালালদের লালনকারীরা রয়ে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
আসলে সহকারী পরিচালক এএসএম ওয়াজেদ হোসেন, তার স্ত্রী ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিষয়ে দুদক যদি তদন্ত করতো, তার সম্পদের পরিমাণ কত তা বেরিয়ে আসতো। সূত্রে জানা যায়, সহকারী পরিচালক এএসএম ওয়াজেদ হোসেনের ঢাকায় রয়েছে বিলাসবহুল একাধিক ফ্ল্যাট। বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে দালাল চক্রটি সেবাগ্রহীতাদের জিম্মি করে ঘুষ আদায় করে।
শুধু দালাল চক্র নয়, অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে বিআরটিএ যশোরের সহকারী পরিচালক এএসএম ওয়াজেদ হোসেন বলেন, গত ডিসেম্বরে আমি এখানে যোগদান করেছি। দালাল আছে তবে এখন কম, আর বিআরটিএ নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা সংবাদ শিরোনাম হয়, যা স্বাভাবিক। কাজ করতে গেলে ভালো-মন্দ হবেই।
সূত্রে জানা গেছে, এএসএম ওয়াজেদ যশোরে অবৈধভাবে বদলি হয়ে এসেছেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে যশোর বিআরটিএ অফিসে যোগদান করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।