টাঙ্গাইলের পৌলী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ধ্বংসের মুখে রেলওয়ে সেতু

স্টাফ রিপোর্টার:


টাঙ্গাইলের কালিহাতীর পৌলী নদী থেকে ভেকু মেশিন বসিয়ে চারটি পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ট্রাকে ভরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী একটি মহলের বিরুদ্ধে। এতে নদীর ওপর নির্মিত রেল সেতু ও মহাসড়কের ব্রিজ চরম হুমকির মুখে পড়েছে।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সেতুর দুই পাশে মাটি সরে যাচ্ছে, যা বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে এই অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙনের ঘটনা ঘটে। ইতোপূর্বে ভাঙনে শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দুই বছর আগে রেলসেতুর পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, এতে ভোগান্তিতে পড়ে হাজারো মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের পাশে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেল ও সড়ক সেতুর অদূরে ভেকু বসিয়ে বালু কাটা হচ্ছে। সেই বালু ট্রাকে ভরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাইড বাঁধও হুমকির মুখে পড়েছে।

বালু উত্তোলনের ফলে ইতোমধ্যে দুইবার তিতাস গ্যাসের মূল পাইপলাইন ফেটে গেছে, যার ফলে টাঙ্গাইল, গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ হয়ে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে। ওই সময় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। কিন্তু পাইপলাইন মেরামতের পর ফের শুরু হয় বালু উত্তোলনের মহোৎসব।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এই অবৈধ বালু ব্যবসা। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে সরকারি স্থাপনাসহ পুরো জনপদ ঝুঁকির মুখে পড়বে। এলাকাবাসী আরও জানান, বালু ব্যবসায়ীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে, যা থেকে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “পৌলী নদীতে রেল ও মহাসড়কের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু থাকায় এলাকাটি স্পর্শকাতর ও বিপদজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ কারণে এলাকাটি ‘বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম)’ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। এখানে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হবে।”

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, “এর আগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পৌলী নদী থেকে বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ করা হয়েছিল। দ্রুত আবারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *