কামরুল ইসলাম:
লোহাগাড়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে চলছে অবৈধভাবে মাটি কাটার মহোৎসব, অথচ প্রশাসন কার্যত নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান দেখা গেলেও তা শুধুই লোক দেখানো বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। অভিযানের পরপরই রাতের অন্ধকারে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে মাটি খেকো সিন্ডিকেটগুলো।
বিশেষ করে টংকবতি ও ডলু খালের তীরবর্তী ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার অভিযোগ উঠেছে এসব প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে লোহাগাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিযান চালিয়ে কয়েকটি ট্রাক ও একটি স্কেভেটর মেশিন জব্দ করলেও কার্যত এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হয়নি।
রোববার (১১ মে) রাতে চরম্বা, আমিরাবাদ ও কলাউজান ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাটি কাটার ভয়াবহ দৃশ্য। রাতভর চলে এই কর্মকাণ্ড। স্থানীয়রা বলছেন, এত বড় পরিসরে মাটি কাটা দেখে যে কেউ অবাক হয়ে যাবেন।
এলাকাবাসীর দাবি, এই মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত রয়েছে একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। তারা জানান, বর্তমান সরকার দলীয় পরিচয়ের আড়ালে এসব ব্যক্তি দাপটের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন—লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই অবৈধ মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত।
স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, প্রায় পাঁচ মাস ধরে ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালু কাটা হচ্ছে। প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হলেও কাউকে আটক করা হয় না, ফলে দোষীরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
সচেতন মহল মনে করেন, এই অবৈধ মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে কেবল জরিমানা নয়, দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ডের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তারা বলেন, শুধু উপজেলা প্রশাসন নয়, প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও মাঠে নামানো দরকার। এভাবে ফসলি জমি নষ্ট করে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা আগামী দিনের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে।
সাম্প্রতিক এক অভিযানে রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়, সাংবাদিকদের তথ্য ও কিছু সৎ রাজনৈতিক নেতার সুপারিশে। অভিযানে কিছু যানবাহন ও যন্ত্রপাতি জব্দ হলেও কাউকে আটক করা হয়নি। অথচ এ ধরনের অপরাধে জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে—এটাই এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের দাবি।