প্রভাস চক্রবর্ত্তী,বোয়ালখালী:
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে আর মাত্র একধাপ বাকি। অবশেষে দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর বহু প্রত্যাশিত কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হচ্ছে। আজ বুধবার (১৪ মে), এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রামের কৃতিসন্তান, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম চট্টগ্রাম সফর, যা ভিন্ন মাত্রা এবং আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে স্থানীয় জনগণের মাঝে।
দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়াসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ আন্দোলনের ফল আজ বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। কালুরঘাট দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের দাবিতে কয়েক দশক ধরে চলা আন্দোলন এবার সফলতার মুখ দেখছে। এই উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ৯টায় বোয়ালখালী নাগরিক সমাজ ও ‘কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের’ যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে আনন্দ র্যালি।
র্যালিটি কালুরঘাট সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত গিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে।
ধর্মীয়ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্যোগ
সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে শুকরিয়া আদায় ও নির্মাণকাজ যেন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়—এই প্রার্থনায় শুক্রবার (১৬ মে) বোয়ালখালীর প্রতিটি মসজিদে জুমার নামাজের পর বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতিও অনুরোধ জানানো হয়েছে যেন তারা নিজ নিজ ধর্মীয় রীতিতে এই মহৎ প্রকল্পের সাফল্য কামনায় প্রার্থনা করেন।
বিশেষ সফরসূচিতে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিতে চট্টগ্রামে এসেছেন। তার সফরের অংশ হিসেবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠানটি বেলা ১১:৪৫ থেকে ১:১৫ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সুবক্তগীন জানিয়েছেন, ড. ইউনূস নিজেই অনুরোধ করেছেন ভিত্তিপ্রস্তরের ফলকে তার নাম না রাখতে, যা দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
প্রকল্পের তথ্য ও নির্মাণ পরিকল্পনা
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কালুরঘাট রেলওয়ে ও সড়ক সেতু প্রকল্পটি ২০২৪ সালে একনেক অনুমোদন পায়। বর্তমানে পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। দুই ধাপে এই নিয়োগ শেষ করতে প্রায় ৬ মাস সময় লাগবে। এরপর জমি অধিগ্রহণ ও বিস্তারিত ডিজাইন চূড়ান্ত করে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি প্রকল্পের ভৌত নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
সেতুটি হবে এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্টেইড ধরনের। সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার, যার মধ্যে মূল নদীজুড়ে অংশটি হবে ৭০০ মিটার। উভয় পাশে সাড়ে ৪ কিলোমিটার করে ভায়াডাক্ট নির্মাণ হবে। সেতুর এক পাশে থাকবে দুটি ডুয়াল গেজ রেললাইন, অপর পাশে থাকবে দুই লেনের মানসম্পন্ন সড়কপথ। দুই পাশে ৫ ফুট প্রস্থের সার্ভিস লেন ও পথচারীদের হাঁটার পথ থাকবে।
নদীর উপর থাকবে ৫টি স্প্যানসহ মোট ৭টি স্প্যান, যা নদীবান্ধব প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হবে।
এক কোটির বেশি মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন শুরু
এই সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রায় এক কোটির বেশি মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। সড়ক, রেল, বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই সেতু নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই মাইলফলক অর্জনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ চট্টগ্রামজুড়ে তৈরি হয়েছে উৎসবের আমেজ। মানুষের মুখে মুখে এখন একটাই কথা—“অবশেষে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।”