রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি:
সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রক্ষায় কলম ধরার ‘অপরাধে’ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার এক সাংবাদিক পরিবার। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সাবেক মেয়র এবং বিএনপির পরিচয়ধারী সন্ত্রাসী আল মামুন খান ও তার নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী বাহিনী এ হামলার পেছনে জড়িত।
ঘটনার সূত্রপাত ৮ মে, যখন ধোকড়াকুল কলেজে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলায় এক কলেজছাত্র আহত হয়। এই খবর ১১ মে দৈনিক স্বাধীন সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ করেন রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি মো. রবিউল ইসলাম। এরপর ১৩ মে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সাংবাদিক রবিউলের ছেলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘শ্যামলী এন্ড হানিফ কাউন্টার’-এ হামলা চালায় মামুনের লোকজন।
প্রতিষ্ঠানে হামলা ও মাদক ফাঁসানোর চক্রান্ত
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধোকড়াকুল কলেজের অধ্যাপক একরামুল ইসলাম ও মামুনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী দল এসে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায় এবং ক্যাশ ড্রয়ারে থাকা অগ্রিম টিকিট বিক্রির টাকা লুট করে নেয়। এরপর তারা পরিকল্পিতভাবে সঙ্গে আনা গাঁজা, ট্যাপেন্টা প্রিন্টারে ও চেম্বারে রেখে সাংবাদিকের ছেলেকে মাদক ব্যবসায়ী সাজাতে চায়।
মেহেদী নামের ওই তরুণকে তারা ধরে নিয়ে গিয়ে ভয়ভীতি ও শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে মাদক সেবনের দৃশ্য তৈরি করে ভিডিও ধারণ করে। এমনকি ইয়াবা সেবনের পাইপ মুখে দিয়ে, পকেটে মাদক ঢুকিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ।
পুরোনো শত্রুতা, চলমান ষড়যন্ত্র
সাংবাদিক রবিউল ইসলাম জানান, এই মামুন চক্র এর আগেও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অপপ্রচার, প্রাণনাশের হুমকি এবং হয়রানি চালিয়েছে। তিনি এ বিষয়ে থানায় একটি সাইবার ক্রাইম মামলা দায়ের করেছেন।
এলাকাবাসী জানায়, মামুনের নির্দেশে তার অনুসারী তথাকথিত সাংবাদিক রুবেল ও মিজান, পতিতা রিপা—সবাই মিলে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছে। রিপা নামে এক নারী, যিনি পতিতাবৃত্তি ও মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে, সেও এ ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষ অংশ নেয়।
মামুনের ‘হাতিয়ার’—সন্ত্রাসী দ্বীপ, চান্দু ও মিজান
এলাকাবাসীর ভাষ্য মতে, মামুনের হাতে গড়া সন্ত্রাসী বাহিনীর অন্যতম তিন সদস্য হলো—দ্বীপ, চান্দু ও মিজান। তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্যাতন চালিয়ে আসছে। সাধারণ মানুষ, এমনকি মান্যবর ব্যক্তিরাও তাদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।
বিএনপি নেতারাও রেহাই পাননি
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের বিএনপির ৬ জন সম্মানিত নেতাও সন্ত্রাসী মামুন ও তার বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। মামুন তার প্রতিপক্ষ কাউকেই ছাড় দেননি। সবাইকে দমন করতে তার এই বাহিনী ব্যবহার করে আসছেন তিনি।
প্রশাসনের নীরবতা
সাংবাদিক রবিউল ইসলাম হামলার সময় পুঠিয়া থানায় ফোন করলে, ওসি কবির হোসেন ও তদন্ত ওসি কেউই কোনও মন্তব্য করতে চাননি। প্রশাসনের এই নীরবতায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবি
পুঠিয়ার সচেতন নাগরিক সমাজ ও স্থানীয় জনগণ ঘটনার দ্রুত তদন্ত, দোষীদের গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তি দাবি করছেন। তারা বলেন, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এবং সমাজকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে এখনই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।