আবদুল আউয়াল:
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচরের পালস্-এইড জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসা এক প্রসূতির বিল ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা।
ভাইরাল হওয়া বিল অনুযায়ী, তানজিলা নামের এক রোগী গত শুক্রবার (১৬ মে ২০২৫) হাসপাতালে ভর্তি হন। বিলের বিবরণে দেখা গেছে—ভর্তি ফি ৫০০ টাকা, কেবিন ভাড়া ১,০০০ টাকা, হাসপাতালের নরমাল ডেলিভারি (NVD) চার্জ ৭,০০০ টাকা, ওষুধ বাবদ ৫০০ টাকা এবং ‘সার্জন ফি’ হিসেবে ৬,০০০ টাকা। সব মিলিয়ে মোট বিল ১৫,০০০ টাকা।
বিতর্কের মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘সার্জন ফি’। সাধারণত এটি সিজারিয়ান অপারেশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও, রোগীর পরিবার দাবি করছে—তানজিলার ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে এবং মাত্র পাঁচ মিনিটেই সন্তান প্রসব সম্পন্ন হয়।
চিকিৎসা নীতিমালা অনুযায়ী, রোগীর চিকিৎসা ও সেবাসংক্রান্ত প্রতিটি খরচ স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন করা এবং নির্দিষ্ট খাতে ব্যাখ্যা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এলাকাবাসীর মতে, এমন বিলিং পদ্ধতি সাধারণ মানুষের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর প্রতি অনাস্থা বাড়াচ্ছে এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে নিরুৎসাহিত করছে।
প্রসূতির আত্মীয় মো. মোজাম্মেল কাজী বলেন, “আমার আত্মীয় তানজিলাকে প্রসব বেদনা উঠলে হাসপাতালে নিয়ে যাই। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে নরমাল ডেলিভারি হয়ে যায়। এরপর ১৫ হাজার টাকার বিল দেওয়া হয়। কারণ জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ দুর্ব্যবহার করে।”
মোহনপুর থেকে আসা আরেক রোগী মো. সুমন অভিযোগ করেন, “আমার স্ত্রীর ডেলিভারির সময় সরাসরি বলা হয় সিজার করতে হবে। উপায় না দেখে রাজি হই। পরে ২৫ হাজার টাকা বিল দেওয়া হয়।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের ম্যানেজার মো. লিমন বলেন, “সাধারণত নরমাল ডেলিভারির জন্য ১২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এই রোগীর ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা ছিল, তাই অতিরিক্ত সার্ভিস বাবদ ১৫ হাজার টাকা রাখা হয়েছে।”
তবে রোগীর পরিবারসহ অনেকেই এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। তাদের দাবি, যদি কোনো জটিলতা থাকত, সেটি আলাদা খাতে উল্লেখ করা উচিত ছিল। ‘সার্জন ফি’ নামে অতিরিক্ত চার্জ করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মতলব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, “বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে দেখেছি। আমি বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণে আছি। সাধারণত নরমাল ডেলিভারিতে এত বিল হওয়ার কথা নয়। অনিয়ম হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”