চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সজনপ্রীতির কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ক্ষোভ

কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম:


চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি যখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত, তখন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষা করে হাইব্রিড ও বিতর্কিত নেতাদের পদ পদবি দেওয়া হয়েছে, যার ফলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ—কমিটিতে এমন কিছু ব্যক্তিকে স্থান দেওয়া হয়েছে, যারা বিএনপির দুঃসময়ে পর্দার আড়ালে থেকে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় চাকরি ও কোটি টাকার ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। তাদের কালো টাকার বিনিময়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। অন্যদিকে, যারা দলীয় আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন, যাদের অনেকেই ব্যবসা ও জীবনধারণের ক্ষতি স্বীকার করেও রাজপথে ছিলেন, তাদেরকে পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হয়নি।

তারা বলেন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী জীবিত থাকলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটিতে এই ধরনের সৃজনশীল অব্যবস্থা হতো না। তাঁর নেতৃত্বে যে সংগঠন গড়ে উঠেছিল, সেখানে ত্যাগী নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন হতো। অথচ বর্তমানে দলের প্রয়োজনে যারা জীবন বাজি রেখে রাজপথে ছিলেন, তাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

এদিকে মহানগর ও উত্তর জেলা বিএনপি যেখানে থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের তোড়জোড় চালাচ্ছে, সেখানে দক্ষিণ জেলার রাজনীতি ধ্বংসের মুখে বলে অভিযোগ উঠেছে। দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ জেলা বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ২২ মে দক্ষিণ জেলা বিএনপির নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রথম পরিচিতি সভায় এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

দলের প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চট্টগ্রাম বিভাগে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ১৫ মে নগর বিএনপি কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। মহানগর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপিও এই কার্যক্রম শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তৃণমূল নেতাদের দাবি, সর্বপ্রথমে দক্ষিণ জেলা বিএনপির বিতর্কিত কমিটি ভেঙে দিয়ে ত্যাগী নেতাদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে।

এদিকে উত্তর জেলা বিএনপির উদ্যোগে ফেব্রুয়ারি থেকে সদস্য নবায়ন কর্মসূচি শুরু হয়েছে এবং তা প্রতিটি উপজেলা ও থানায় চলমান রয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সদস্য নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর পুনর্গঠন সম্পন্ন করা হবে। এই পুনর্গঠনের সুফল পাবে আগামী ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা।

মহানগর বিএনপি:
গত ৭ জুলাই আলহাজ এরশাদ উল্লাহকে আহ্বায়ক এবং নাজিমুর রহমানকে সদস্যসচিব করে নগর বিএনপির দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। পরে ৪ নভেম্বর ৫৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৩ ডিসেম্বর ভেঙে দেওয়া হয় ১৫টি থানা ও ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড কমিটি। যদিও ৫ মাস পার হলেও এসব কমিটি পুনর্গঠিত হয়নি। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন প্রায় চূড়ান্ত এবং ঈদুল আজহার পর তা ঘোষণা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান বলেন, “মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ঈদের পর কমিটি ঘোষণা করে সদস্য নবায়ন কার্যক্রম শুরু করা হবে।”

দক্ষিণ জেলা বিএনপি:
দক্ষিণ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রথম পরিচিতি সভা সামনে। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের উপযুক্ত সম্মান ও পদ প্রদান না করলে এই কমিটি কখনোই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *