স্টাফ রিপোর্টার:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টার হাত থেকে সম্মাননা পেলেন মির্জাখীল দরবারের সাজ্জাদানীনসহ চারজন। এ এক বিরল সম্মান ও প্রাপ্তি আমাদের জন্য।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠান বুধবার সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে এটি বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ সমাবর্তনে রূপ নেয়। এই বিপুল আয়োজনের সবচেয়ে স্মরণীয় ও মর্যাদাপূর্ণ অধ্যায় ছিল মাত্র চারজন পিএইচ.ডি ডিগ্রিধারীর হাতে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজহাতে সম্মাননা তুলে দেন। এই চারজনের একজন ড. মৌলানা মোহাম্মদ মকছুদুর রহমান।
এই অনন্য অর্জনে ড. মকছুদুর রহমান পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার দরবারে অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং গভীরভাবে সম্মানিত বোধ করেন। তিনি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরবৃন্দ এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা, ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে—যাঁদের আন্তরিক উদ্যোগ ও স্বীকৃতির কারণে এই বিরল সম্মান অর্জন সম্ভব হয়েছে।
ড. মাওলানা মোহাম্মদ মকছুদুর রহমান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে “Maulana Abdul Hai: An Erudite Jurist and Saint” শীর্ষক গবেষণায় পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এর পূর্বে, ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার বিভাগ থেকে “Hazrat Ashraf Jahāngīr Simnānī (R.A.) and his odd encounters in Sultanat-i-Bangālah: Mirzakhil Darbar Sharif – a case study” শীর্ষক গবেষণায় এম.ফিল ডিগ্রি অর্জন করেন।
শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনে তাঁর দীর্ঘ পথচলায় অসামান্য কৃতিত্ব রয়েছে। দাখিল (১৯৮৯) পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্থান, আলিম (১৯৯১) পরীক্ষায় সার্বিকভাবে দ্বিতীয় এবং সাধারণ গ্রুপে প্রথম স্থান, ফাযিল (১৯৯৩) ও কামিল ফিকহ্ (১৯৯৭) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান, কামিল তাফসীর শরীফ (২০০১) পরীক্ষায় ৮৮৭ নম্বর পেয়ে রেকর্ড গড়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। একইভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বি.এ (১৯৯৮) ও এম.এ (২০০৩) পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করেন।
এই ব্যতিক্রমধর্মী অর্জন তাঁর ব্যক্তিগত মেধা ও পরিশ্রমের ফসল হলেও তিনি বিশ্বাস করেন, এর পেছনে রয়েছে তাঁর পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগ, মানবিকতা ও ইসলামের খাঁটি শিক্ষার প্রতি অবিচল অঙ্গীকার। ড. রহমান বলেন, “এই সম্মান আমি আমার পিতা-মাতা, পূর্বপুরুষ এবং বুজুর্গানেদীনগনের প্রতি উৎসর্গ করছি।”
ড. রহমান একজন মানবসেবী, সমাজসেবক ও আধ্যাত্মিক চিন্তানায়ক। তিনি তাঁর কর্মজীবনে দারিদ্র্য বিমোচন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণ, এতিম ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সহায়তায় নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছেন। তাঁর সমাজ উন্নয়নের মূলধারায় রয়েছে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির প্রসার, এবং শিক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম।
বিশেষ করে তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া আত্মিক ঐতিহ্যকে ধারণ করে জাতিকে আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করার কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। তাঁর পরিবার বাংলাদেশ ও এই উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথিতযশা ওলি, আলেম ও সমাজ সংস্কারকদের ঐতিহ্য বহন করে, যাঁরা আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের পাশাপাশি জনগণের কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনে এই মহান স্বীকৃতি শুধু একজন ব্যক্তির নয়, বরং এটি ইসলামী শিক্ষার, মানবিক মূল্যবোধের এবং সমাজসেবার প্রতি একটি উজ্জ্বল স্বীকৃতি। ড. মাওলানা মোহাম্মদ মকছুদুর রহমান হয়ে উঠেছেন এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা – যিনি জ্ঞান, নৈতিকতা ও সেবার মাধ্যমে সমাজে আলো ছড়াতে বদ্ধপরিকর।
নোট-
আমরা কি পরিমাণ সৌভাগ্যমান। এমন পীরের ছায়াতলে আমরা আছি। আধ্যাত্মিকতা ও জাগতিকতা কোন ক্ষেত্রেই আমরা পিছিয়ে নেই। আমার পীর নিজেকে উজাড় করে তরিকতের প্রসার, হাকিকতের শিক্ষা এবং মারেফতের গূঢ় রহস্যর রসাস্বাদনে নিবেদিত রয়েছেন আর তদারকি করছেন গায়েবী জগতের সবচেয়ে পছন্দনীয় সিলসিলার তথা স্কুল অব স্পিরিট্যুয়ালিজম এর।
“আকাশের চাঁন কি বা আকাশের চাঁন,
দিনে দিনে কি চমকে,জাহাগীরের শান”