আসাদুল ইসলাম :
ছাত্র জনতা হত্যার ম্যাধ্যমে ২০২৪ সালের রক্তাক্ত করা হয়েছিল। ২৪শে বাংলাদেশের রাজপথে আবারও গর্জে উঠেছিল ছাত্রজনতা, কণ্ঠে ছিল একটাই দাবি—“কোটা নয়, মেধা ও সাম্য।” অথচ সেই গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করতে রাষ্ট্র যে ভয়াবহ নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়, তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী ব্যবহার করে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বিরুদ্ধে বর্বর দমন অভিযান চালায়। রাজপথ রঞ্জিত হয় তরুণ প্রাণের রক্তে। ঢাকার শাহবাগ থেকে টিএসসি, চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহী—যেখানেই ছাত্ররা একত্র হয়েছিল, সেখানেই চালানো হয় গুম, গ্রেফতার, এবং নির্বিচারে গুলি। অনেক ছাত্রের নিখোঁজ হওয়া আজও রহস্য, বহু পরিবার এখনও সন্তান ফিরে পাওয়ার আশায় অপেক্ষায়।
ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার তো দূরের কথা, সরকার আজ সেই শহীদ ছাত্রদের রক্তকে মিথ্যে প্রমাণ করতে আবারো পুরনো কোটাব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছে। বর্তমান সরকার , “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় জুলাই ২০২৪ শে আন্দোলনকারী শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে।” শুনতে মানবিক মনে হলেও, প্রকৃতপক্ষে এটি ২০২৪ সালের আন্দোলনের চেতনার সরাসরি বিপরীত।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বহুবার দেখা গেছে, কোটা ব্যবস্থাকে ক্ষমতাসীন দল রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ক্ষমতা রক্ষার তাগিদে সরকার ফের কোটা নিয়ে সামাজিক বিভাজন সৃষ্টি করছে, মেধাবী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করছে।
আসলে প্রশ্নটা একটাই—একটি গণতান্ত্রিক দেশে কি বিশেষ শ্রেণি, পরিবার বা পরিচয়ের ভিত্তিতে সুযোগ দেওয়া ন্যায্য? যেখানে দেশের হাজারো তরুণ-তরুণী রাত জেগে পরিশ্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়, সেখানে কেবল পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া মানে অন্যদের প্রতি চরম অবিচার এবং বৈষম্যের নামান্তর।
জুলাই আন্দোলনে যে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করেছে, এখন সেই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সেই ‘শহীদের পরিবারকে’ সুবিধা দিয়ে নিজেদের অপরাধ ধামাচাপা দিতে চায়।
এটা কি ন্যায়বিচার? নাকি কৌশলী এক প্রতারণা?অথচ ছাত্রদের দাবি ছিল অত্যন্ত যৌক্তিক“মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, স্বজনপ্রীতির অবসান।” সেই দাবির কারণে যারা প্রাণ দিয়েছে, আজ তাদের স্মৃতিকে ব্যবহার করে বৈষম্য ও পক্ষপাতের নয়া পথ তৈরি করা হচ্ছে।
কোটা আজ আর শুধু নিয়োগের প্রশ্ন নয়, এটা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা সত্যিকারের শহীদ, তাদের আত্মত্যাগের মর্যাদা দিতে হলে, এই ভণ্ডামির অবসান ঘটাতে হবে।
সেই দাবি আজও বহাল হোক কোটা নয়, চাই মেধাভিত্তিক, ন্যায্য বাংলাদেশ।
শহীদের রক্ত যেন বৃথা না যায়, ইতিহাস যেন আবারও রক্তচক্ষুকে পরাজিত করে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
শিক্ষার্থী
মোঃ হাসিবুর রহমান হুসাইন
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা কলেজ