কামরুল ইসলাম:
আর মাত্র দুই দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। সেই ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাটগুলো।
গত বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হলেও টানা বৃষ্টির কারণে অনেক গরু ব্যবসায়ী হাটে আসতে পারেননি। তবে ৪ জুন বুধবার দুপুরে সূর্যের দেখা মেলায় হাটগুলোতে গরু আসা শুরু হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
হাটে পশুর চাপ, ক্রেতার ঘাটতি
নগরের সাগরিকা, কর্ণফুলী ও বিবিরহাটসহ বড় হাটগুলো ইতোমধ্যে গরুতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ছাগল, ভেড়া, মহিষ এমনকি কিছু হাটে উটও দেখা গেছে। ছোট, মাঝারি ও বড় আকৃতির সব ধরনের পশুই রয়েছে। তবে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি মাঝারি আকৃতির গরুর প্রতি।
বিক্রেতারা বলছেন, প্রচুর গরু থাকলেও এখনও আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। অনেকেই শুধু পশু দেখে যাচ্ছেন, দাম যাচাই করছেন। শহরে রাখার জায়গার সমস্যা, দেখভালের লোক না থাকায় অধিকাংশ মানুষ শেষ দুই–একদিনেই পশু কেনেন বলে জানান বিক্রেতারা।
দাম কেমন?
হাটে ঘুরে দেখা গেছে, দেশি ছোট গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। মাঝারি আকৃতির গরু ২ থেকে ৪ লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর বড় গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে ৫ লাখ থেকে ৮-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত, কিছু ক্ষেত্রে তারও বেশি।
কুমিল্লা থেকে আসা ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, “গরু অনেক এনেছি। খাওয়ানোর খরচ, ট্রাক ভাড়া, হাটের ইজারা—সব মিলিয়ে দাম একটু বেশি রাখতে হচ্ছে। তবে সাধ্যের মধ্যেই বিক্রি করার চেষ্টা করছি।”
আরেক বেপারি আব্দুল্লাহ শরীফ বলেন, “১৪টি গরুর জন্য ইজারাদারকে ৬০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। যাতায়াত খরচও বেড়েছে। এখনও বেচাকেনা শুরু হয়নি, তবে আশা করছি বুধবার বিকেল থেকে জমবে।”
ক্রেতারা কী বলছেন?
সরকারি চাকরিজীবী মো. নুরুল আমিন বলেন, “গরু দেখতে এসেছি। আজকে কিনব না। দাম যাচাই করছি।”
আরেক ক্রেতা বেলায়েত বলেন, “অনেক গরু এসেছে। দাম তুলনামূলক কম। তবে রাখার জায়গা না থাকায় পরে নেব ভেবে যাচাই করছি।”
চট্টগ্রামে পশুর চাহিদা ও ঘাটতি
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবছর চট্টগ্রামে কোরবানির জন্য সম্ভাব্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশুর সংখ্যা ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি। ফলে ঘাটতি রয়েছে ৩৫ হাজার ৩৮৭টি পশু।
তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অন্যান্য জেলা থেকে পশু আসায় চাহিদা পূরণে কোনো সংকট হবে না।
এবার চট্টগ্রামে কোরবানির জন্য উৎপাদিত পশুর মধ্যে রয়েছে—
-
গরু: ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩টি
-
মহিষ: ৬৪ হাজার ১৬৩টি
-
ছাগল: ২ লাখ ৫১ হাজার ৭৪টি
-
ভেড়া: ৫৫ হাজার ৬৯৭টি
২২৮টি হাট, নিরাপত্তা জোরদার
চট্টগ্রামে এবার ২২৮টি কোরবানির পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে ৭৫টি স্থায়ী ও ১৫৩টি অস্থায়ী। নগরীতে ১৩টি হাট রয়েছে, যার মধ্যে ৩টি স্থায়ী ও ১০টি অস্থায়ী।
স্থায়ী হাটগুলো হলো: সাগরিকা বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার।
পশুর হাট ঘিরে যাতে চাঁদাবাজি, ছিনতাই বা কৃত্রিম সংকট তৈরি না হয়, সেজন্য নগর পুলিশ গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করেছে।