করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন নির্দেশনা ও প্রস্তুতি

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:

 

বিশ্বব্যাপী আবারও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশেও করোনার একটি নতুন উপধরনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকদের সতর্ক করতে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বুধবার (১১ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব নির্দেশনার কথা জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট এবং দেশের ঝুঁকি

সংবাদ সম্মেলনে মহাপরিচালক জানান, “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের হার আবারও বাড়ছে। ইতোমধ্যে ভাইরাসটির কয়েকটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এই ভাইরাস বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

এই প্রেক্ষাপটে দেশের সব স্থলবন্দর, নৌবন্দর ও বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধিমালার (IHR) আওতাধীন ডেস্কগুলোকে আরও সক্রিয় করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব স্থানে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

করোনা প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে নিচের ১১ দফা নির্দেশনা দেন:

১. জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। একান্ত প্রয়োজন হলে অবশ্যই মাস্ক পরুন।
২. শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করুন।
৩. হাঁচি বা কাশির সময় কনুই কিংবা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন।
৪. ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন।
৫. সাবান ও পানি অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত ধুয়ে ফেলুন।
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
৭. আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
৮. শারীরিক অসুস্থতা থাকলে বাড়িতে থাকুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৯. টিকাদান কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুন।
১০. করোনা উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করুন।
১১. সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ মেনে চলুন।

করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সংক্রমণ মোকাবেলায় পরীক্ষার সক্ষমতা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাও পুনরায় সক্রিয় করা হচ্ছে। আরটি-পিসিআর ও র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে।

এছাড়া, হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত করোনা টিকা, প্রয়োজনীয় ওষুধ, অক্সিজেন, হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ও এইচডিইউ সুবিধা প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোকে আগেভাগে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য কেএন-৯৫ মাস্ক, পিপিই ও ফেস শিল্ড সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এসব প্রস্তুতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক আগমন ও সংক্রমণের ঝুঁকি

আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে দেশে নতুন ভ্যারিয়েন্ট প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এজন্য বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও স্থলবন্দরে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে এবং এসব পয়েন্টে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি (IHR) অনুসরণে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জনসাধারণকে সচেতন থাকার আহ্বান

সংবাদ সম্মেলনের শেষে অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, “করোনার পুরনো অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের এবার আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ব্যক্তি সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমেই আমরা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *