জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে বৈঠকে বসছেন ড. ইউনূস ও তারেক রহমান

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধানে একটি বহুল প্রতীক্ষিত ঐতিহাসিক বৈঠকের সাক্ষী হতে যাচ্ছে লন্ডন। আগামীকাল শুক্রবার, স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত, লন্ডনের বিখ্যাত ডরচেস্টার হোটেলে মুখোমুখি বসতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দুই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার এই ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক ইতোমধ্যেই দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।

এই বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ পর্যন্ত সবাই মনে করছেন—এটি শুধু দুই নেতার সাক্ষাৎ নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ধারণের একটি বড় মাইলফলক হতে যাচ্ছে।

প্রধান আলোচ্য হতে পারে জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি পরিবর্তন

স্বাধীন সংবাদের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, বৈঠকের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা হতে পারে জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা এগিয়ে আনা। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে, সরকার যদি এপ্রিলের নির্ধারিত সময়সীমা থেকে সরে আসে, তাহলে বিএনপিও তাদের ডিসেম্বরে নির্বাচনের প্রস্তাব থেকে সরে আসবে। এর বদলে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন আয়োজনের একটি গ্রহণযোগ্য রূপরেখা তৈরি হতে পারে।

জুলাই সনদ, সংস্কার ও অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখাও আলোচনায় আসবে

এছাড়াও বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিচার বিভাগের সংস্কার, সংসদের কাঠামো পুনর্গঠন, অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা ও কর্তৃত্ব, এবং আলোচিত “জুলাই সনদ” (জুলাই চার্টার) নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র মতে, আলোচনার অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচিত সরকার পরবর্তীতে জাতীয় সংসদে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত কার্যক্রম অনুমোদন দেবে—এমন একটি পরিকল্পনাও থাকতে পারে আলোচনার মধ্যে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্ব পাচ্ছে বৈঠক

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন উচ্চপর্যায়ের আলোচনা দীর্ঘদিন পর হতে যাচ্ছে। এই বৈঠক যেন সফল হয়, সে প্রত্যাশায় চোখ রেখেছে গোটা জাতি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান স্বাধীন সংবাদকে বলেন,
“এই ঐতিহাসিক বৈঠকের ফলাফল দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আলোচনা সফল হলে একটি সমঝোতা হবে, যা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এনে দেবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দুই পক্ষই প্রয়োজনীয় ছাড় দেবে।”

বিএনপি নেতৃবৃন্দের প্রত্যাশা: দেশবাসীর আশার আলো জ্বলবে

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “গোটা জাতি লন্ডনের দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস করি—এটি হবে ঐতিহাসিক বৈঠক এবং এর মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে।”

তিনি আরও জানান, “বিএনপি এরই মধ্যে যৌক্তিকভাবে ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক। দেশবাসী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।”

যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা থাকবে হোটেলের সামনে

ডরচেস্টার হোটেলে বৈঠক উপলক্ষে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। হোটেলের বাইরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠককে আমরা স্বাগত জানাই। নেতাকর্মীরা হোটেলের বাইরে উপস্থিত থাকবেন এবং সফল আলোচনা শেষে উভয় নেতার হাসিমাখা মুখ দেখে জাতি স্বস্তি পাবে।”

সরকারি প্রতিক্রিয়া: আলোচনার বিষয়বস্তু উন্মুক্ত

মঙ্গলবার লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন,
“বৈঠকের নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা নেই। অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমান বাংলাদেশের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন, সংস্কার, ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমসহ গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো বিষয় আলোচনায় আসতে পারে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *